কী করতে চাই আর কী করি

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি
লিখেছেন মুহম্মদ জুবায়ের (তারিখ: মঙ্গল, ০৩/০৬/২০০৮ - ১১:৫৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

কলেজে ভর্তি হওয়ার অল্পকালের মধ্যেই প্রেমে পড়ি। ঐ বয়সে সবাই যেমন পড়ে। সম্পর্কটি বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। কিন্তু সেই সময়ের একটি অভ্যাস আমার চিরকালের সঙ্গী হয়ে গেলো। অভ্যাসটি রাত্রি জাগরণের।

প্রেমের সঙ্গে রাত্রি জাগরণের খুব ঘনিষ্ঠ আত্মীয়তা আছে, ভুক্তভোগীরা এই সাক্ষ্যই দেবেন। আমার পক্ষেও ব্যতিক্রম হওয়া সম্ভব ছিলো না। অভ্যাসটি এমনই হয়ে গেছে যে কখন ঘুমাতে যাবো তা সম্পূর্ণ আমার ইচ্ছে। কিন্তু বিপদ হয় জেগে ওঠার সময়, তার নিয়ন্ত্রণ আমার হাতে নেই। ভোরবেলার অ্যালার্মঘড়ি আমাকে জাগায়, যেহেতু জীবিকা নির্বাহের জন্যে একটি কর্ম আমাকে করতে হয় এবং সেখানে সকালেই হাজিরা দেওয়া বাধ্যতামূলক।

প্রাতঃকালের জাগরণটি ততোটা রূঢ় যাতে না হয়, সেজন্যে নানাবিধ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়ে গেছে। কর্কশ ক্যাঁ ক্যাঁ আওয়াজের অ্যালার্মের বদলে রেডিওর গান ঘুম ভাঙাবে, এই আশায় রেডিওসহ অ্যালার্ম ঘড়ি এলো। কিন্তু যে গানটি তখন বাজছে তা আমার খুব অপছন্দের হলে? সাতসকালে গানের বদলে তারস্বরে বিজ্ঞাপন শুনে ঘুম ভাঙলে তা-ও খুব সুখের হয় না। এরপরে একটি অ্যালার্মঘড়ি কেনা হলো যেখানে ইচ্ছে করলে সমুদ্রের কল্লোল শোনা যাবে, অথবা পাখির ডাকে নিদ্রাভঙ্গ হবে।

কিছুই আসলে বদলায়নি। একই অনিচ্ছা ও বিরক্তি নিয়ে সকালে ঘুম থেকে জেগে উঠি। বিছানায় উঠে বসে প্রতিদিন ভাবি, আজ কাজে না গেলে কী হয়? অথবা একেবারে কাজ না করতে হলে? কাজ ছেড়ে দিলে?

গ্রাসাচ্ছদনের চিন্তা আসে, পরিবারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ববোধ জাগ্রত হয়। অনিচ্ছুক শরীর ও মনকে প্রস্তুত করতে হয় আরেকটি দিনের জন্যে।

জীবন নির্বাহ করার জন্যে কাজ করতে না হলে কী করতাম আমার একেকটি দিন নিয়ে? আহ, কতো দীর্ঘ সেই ইচ্ছেগুলির তালিকা!

শয্যা ত্যাগ করা যেতো অ্যালার্মের নির্দেশ ছাড়া, ঘুমের বরাদ্দ আদায় পূর্ণ হলে। জানালার পর্দা সরালে আলোয় আলোময় একটি ঝলমলে দিন বাইরে। মেঘলা হলেই কী এমন ক্ষতি? অথবা হোক না যে কোনো রকমের বৃষ্টি - ঝিরঝিরে বা ঝমঝম।

পড়বো বলে জমিয়ে রেখেছি অগণন বই, তার একটা খুলে বসা যায়। অসংখ্য সিডি কেনা আছে, অনেকগুলি বছরের পর বছর ধরে পড়ে আছে সেলোফেনের মোড়কমুক্ত হওয়ার অপেক্ষায়। আমার মেয়ে জিজ্ঞেস করে, শোনো না, তাহলে কিনেছো কেন?

আমি তাকে বলি, এগুলি আমার অবসর জীবনের সঞ্চয়। মানুষ টাকাপয়সা জমায়, আমি রাখি বই আর গানের সঞ্চয়।

বিকেলে ছেলেকে নিয়ে পার্কে যাওয়া যায়। তার খুব ইচ্ছে, একা একা বাস্কেটবল প্র্যাকটিস করার বদলে বাবাও তার সঙ্গে থাকবে। স্ত্রীর ইচ্ছে একত্রে কোনো সিনেমা দেখতে যাই, অনেক বছর হয়নি। চাইলে তাদের ইচ্ছেপূরণ ঘটানো যায়।

না-লেখা ও অসমাপ্ত গল্প-উপন্যাসগুলি লিখতে বসতে পারি। গভীর রাত পর্যন্ত একটানা লিখবো। ভালোমন্দ যা-ই হোক, একেকটি লেখা শেষ করার কী গভীর পরিতৃপ্তি! সেই স্বাদ কতোদিন পাওয়া হয়নি।

প্রকৃতপক্ষে কোনোকিছুই ঘটে না। সঞ্চয় করে রাখা বইয়ের বদলে অফিসে বসে এটা-ওটার ম্যানুয়াল পড়ি, ইমেল পড়ি। গান শোনার বাসনা ত্যাগ করে হেডফোন কানে লাগিয়ে কনফারেন্স কলের অনন্ত বকরবকর শুনি। লেখালেখিও হয় বটে। নালিশ এটুকুই, লিখতে হয় যা লিখতে চাই না।

দিনের শেষে জগতের সমস্ত অবসাদ নিয়ে ঘরে ফিরে স্ত্রী বা ছেলের বাসনা পূরণের ধারেকাছেও যাওয়া হয় না। সবশেষে একটু রাতে যখন অবসর মেলে, কমপিউটারের সামনে বসি। মনে ক্ষীণ আশা, আজ কয়েক পাতা লিখবো। হয় না, ইমেল-ইন্টারনেট সে সময়টুকু গ্রাস করে ফেলে। এইসব শেষ হলে তখন মনে হয়, আজ থাক, কাল থেকে ঠিক ঠিক হবে।

সেই আগামীকালের আশাটুকুই এখনো জাগ্রত।


মন্তব্য

সবজান্তা এর ছবি

একই ভূমিকায় আমরা সবাই।


অলমিতি বিস্তারেণ

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

তাহলে আর দুঃখ করি কেন? হাসি

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

নিঝুম এর ছবি

কি সুন্দর করে লিখেছেন আপনি !! দিন রাতের কাব্য হয়ত এরকমই...
---------------------------------------------------------
পৃথিবীর সব সীমান্ত আমায় বিরক্ত করে। আমার বিশ্রী লাগে যে, আমি কিছুই জানিনা...

---------------------------------------------------------------------------
কারও শেষ হয় নির্বাসনের জীবন । কারও হয় না । আমি কিন্তু পুষে রাখি দুঃসহ দেশহীনতা । মাঝে মাঝে শুধু কষ্টের কথা গুলো জড়ো করে কাউকে শোনাই, ভূমিকা ছাড়াই -- তসলিমা নাসরিন

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

দিনরাতের কাব্য বলবেন? আমি তো বলি নিরেট গদ্য! মন খারাপ

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

এক সচলমে দো সন্ন্যাসীর জায়গা হবে? চোখ টিপি

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

হিমু এর ছবি

ভুক্তভোগী হিসেবে সাক্ষ্য দিচ্ছি।

তবে প্রেম চুরমার হয়ে গেলেও রাত্রি জাগরণের অভ্যাস সে ভাঙনের অনুগামী হয় না। বরং রাত্রি জাগরণের আস্তিনের ঝুল ধরে নতুন প্রেম বেতালের মতো স্কন্ধারূঢ় হয়। কচি ও কাঁচা বয়সে রাত জেগে ফোনে কথা বলতাম, কিছুটা পাক ধরার পর রাত জেগে বই আর সিনেমা নিয়ে থাকতাম। এমনও সময় গেছে, সকাল আটটা থেকে ভোর তিনটা পর্যন্ত টানা জেগে আছি, ক্লাস, টিউশনি, হাবিজাবি চলছে সমানে, ছুটির দুই দিন বুভুক্ষুর মতো নিদ্রাপান করে চলছি, টলতে টলতে জেগে উঠে দেখি সন্ধ্যে নেমে গেছে, চা খেয়ে আড্ডা মারতে বেরিয়ে পড়েছি। এখনও রাত জেগে কাজ করতে হয়, কিন্তু ক্লান্ত লাগে। কী যেন ছেড়ে চলে গেছে আমাকে, রাত জেগে থাকতে পারি না আর আগের মতো।

মাঝে মাঝে মনে হয়, খুব বোকার মতো জীবনটা খরচ করছি। প্রথম তিরিশটা বছর সরকারের খরচে ফূর্তি করে কাটিয়ে বাকি বিশটা বছর খাটতে খাটতে একদিন মরে গেলেও আপসোস থাকতো না। তার বদলে জীবনের সবল সময়টা কাজ করে হেদিয়ে মরছি, আর বুড়ো হবার অপেক্ষায় সময় কাটাচ্ছি। এই ব্যবস্থা পাল্টানো খুব জরুরি।


হাঁটুপানির জলদস্যু

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

জীবনের সবল সময়টা কাজ করে হেদিয়ে মরছি, আর বুড়ো হবার অপেক্ষায় সময় কাটাচ্ছি। এই ব্যবস্থা পাল্টানো খুব জরুরি।

আমার তো ধারণা, বুড়ো বয়সেও কাজ করে যেতে হবে। ব্যবস্থা পাল্টানো? সেটা কীসে হবে ভেবে পাই না।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

দ্রোহী এর ছবি

ছেলে-মেয়েদের অংশটুক বাদ দিলে হুবহু আমার গল্প।

ভাল লাগে না আর এই জীবন!!!


কি মাঝি? ডরাইলা?

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

ছেলেমেয়ের অংশটিও আপনার জীবনে যুক্ত হইবে শীঘ্রই, দিন গণনা শুরু করিয়া দিন। দেঁতো হাসি

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

এই যে আমি... ভোর সাড়ে ৬ টায় ঘুমিয়ে বেলা ৩ টায় উঠে সচলায়তনে এলাম।

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

একটু ভুল হলো। বলতে হবে, রাত ৬টায ঘুমিয়ে সকাল ৩টায় উঠলাম। হাসি

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- আপনের অবস্থা পড়ে মুদি দোকানে সাঁটানো সাইনবোর্ডের কথা মনে হলো। "আজ নগদ, কাল বাকী"। এই "কাল" যে কবে আসবে সে ভগবানই জানেন।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

"কাল" যে একসময় আসবে, সেই স্বপ্ন দেখতে কোনো খরচ নেই। হাসি

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

অতিথি লেখক এর ছবি

উদ্ধৃতি
না-লেখা ও অসমাপ্ত গল্প-উপন্যাসগুলি লিখতে বসতে পারি। গভীর রাত পর্যন্ত একটানা লিখবো। ভালোমন্দ যা-ই হোক, একেকটি লেখা শেষ করার কী গভীর পরিতৃপ্তি!

আসলেই। কিন্তু এই যে শুরু করি করি করে আর হয়ে উঠে না। সেও তো মনে হয় রহস্যময়ী প্রেমিকার চাইতেও আরো রহস্যময়ী। ধরা দেয় কি দেয় না। ছুঁতে গেলে সরে যায়। কখনো বা নিজে এসেই হামলে পড়ে। লেখালেখির ক্ষেত্রে এটি বন্ধ্যা সময়। খুবই কষ্টকর। কিন্তু এই মধ্যবর্তী সময়টিই মনে হয় লেখকের অজান্তেই তাকে ভাবায়। শাণিত করে। পরে যখন কোনো এক সময় লেখাটি দাঁড়িয়ে যায়, আহা কী শান্তি! সেখানেও নিজের অজান্তেই বন্ধ্যা সময়ের বিচিত্র ভাবনাগুলোও চুপিসারে ঠাঁই করে নেয় লেখার ভেতর।
-জুলিয়ান সিদ্দিকী

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

আমার এক অকালপ্রয়াত চিত্রকর বন্ধু মৃত্যুর আগে আক্ষেপ করে বলেছিলেন, যখন আমি জানি চাইলেই যা খুশি আঁকতে পারি, ঠিক তখনই আমাকে চলে যেতে হচ্ছে।

আমার ক্ষেত্রে লেখালেখির বন্ধ্যা সময় যাচ্ছে, তা নয়। এখন আমারও মনে হয়, চাইলেই লিখতে পারি। কিন্তু লেখার অবসরটুকু পাওয়া আর হয় না।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

একই অনিচ্ছা ও বিরক্তি নিয়ে সকালে ঘুম থেকে জেগে উঠি। বিছানায় উঠে বসে প্রতিদিন ভাবি, আজ কাজে না গেলে কী হয়? অথবা একেবারে কাজ না করতে হলে? কাজ ছেড়ে দিলে?

সকালের ঘুম পুরা বেহেশত থেকে উড়ে এসে চোখে জুড়ে বসে। সাথে উপরের ভাবনাগুলো। ঃ)

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

অথচ এমনও তো হয়, যেদিন একটু বেলা করে ঘুমানোর সুযোগ থাকে, ঠিক সেদিন কে জানে কেন সকাল সকাল আচমকা ঘুম ভেঙে যায়।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

আহ, সে কথা আর বলতে।
ছুটির দিনে সকাল ছয়টায় ঘুম ভেঙে যায়। ভাবি, সেই কালঘুম এখন কই? উঠি, জানালার দিকে তাকাই। নিজে নিজে মিথ্যে করে ভাবি, আজ কাজ ছিল, কিন্তু আমার যেতে ইচ্ছে করছে না, এখন ঘুমাবো, সকালের ঘুম, আয় ঘুম আয়। তবুও আসে না।

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

ঘোর অন্যায়! কিন্তু কিছু করার নেই। মন খারাপ

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

আহ্হারে এক্কেরে মনের কথাডা কই ফালাইছেন।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

মনের কতা কই ফালাইলে ততো ফুইসা দ্যাওন লাগে! দেঁতো হাসি

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

স্পর্শ এর ছবি

আমার এখনো প্রথম প্রেম হয়নাই ! মন খারাপ
কবে যে রাত্রি জাগা শিখবো!!!
হায়...
[][][][][][][][][][][][][][][][][][]
ওরে বিহঙ্গ, ওরে বিহঙ্গ মোর,
এখনি, অন্ধ, বন্ধ, কোরো না পাখা।


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

এখনো প্রেম করেননি, এমন কেউ সচলে আসতে পারবেন কি না সেটা বিবেচনা করা খুব জরুরি। চিন্তিত

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

অতিথি লেখক এর ছবি

এই ধরনের কিছু কথা আমারও বলার ইচ্ছে ছিল।
রাতজাগা আর এলার্মঘড়ির ডাকে ওঠে বাথরুমে ব্রাশ করতে করতে জীবনকে গালি দেয়া আমার অনেক কালের নিয়তি। একটাই ফারাক। আামর রাত জাগার শুরুটা প্রেমের কারনে ছিল না। বইপড়া আর পরিবার ছিল এর কারন। বাসায় সবভাইবোন আর আম্মা মিলে আড্ডা হত রোজই , রাতেই জমত তা। খাবার টেবিলে ১২ টা। বাইরের বারান্দায় ১টা। ভাইয়ার রুমে ২ টা। আমার বিছানায় বইয়ের পাতায় ৩ টা।

(রন্টি চৌধুরী)

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

পরিবারে নিজেদের মধ্যে আড্ডা দেওয়ার প্রচলন আমাদের দেশে খুব একটা নেই। আপনি নিশ্চয়ই ভাগ্যবানদের একজন। আমাদের পরিবারেও হতো আব্বা-আম্মাসহ, তবে তা রাত জেগে নয়। আমার পিতা early to bed early to rise-এ বিশ্বাসী ছিলেন চিরকাল। তাঁর পুত্ররা তার প্রায়শ্চিত্ত চোখ টিপি করে যাচ্ছে। রাত্রি জাগরণের শুরুটা হয়েছিলো আমাকে দিয়ে, যেহেতু আমি ভাইবোনদের মধ্যে সবার বড়ো। একসময় পিতামাতার ছায়ার বাইরে আমরা চার ভাইবোন একসঙ্গে ছিলাম কিছুকাল, তখন হতো রাত জেগে আড্ডা।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

তীরন্দাজ এর ছবি

সেই আগামীকালের আশাটুকুই এখনো জাগ্রত।

সেই আগামীকালের দিকে না তাকালে কি টিকে থাকা যেতো?

**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

যেতো না বলেই তো এখনো আগামীকালের দিকে তাকিয়ে আছি। মিথ্যে হলে হবে, তবু ওইটুকু না হলে জীবন বড়ো অর্থহীন হয়ে যায়।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

হু... কি করতে চাই আর কি করি...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

সেটাই তো গল্প চোখ টিপি

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

দিনমান দৌড়াদৌড়ি পাকড়াপাকড়ির পর রাত যেন প্রার্থনার সময়, তাহাজ্জুদের সময়। অনেক রাতে একা বসে কিছুক্ষণ আকাশ-পাতাল, সুমেরু-কুমেরু না ভাবলে ঘুমই হয় না। আর মনে হয় যেন নামাজ কাজা করে ফেলেছি। জুবায়ের ভাই এখানে দেখি, আপনার মতো আমরাও অনেকে সেই নিশির নামাজি। চোখ টিপি

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

মনে হচ্ছে আমরা নিশাচররাই সংখ্যাগুরু। চোখ টিপি

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

অ্যালার্ম ঘড়ি আর বাচ্চাকাচ্চার অংশটুকু বাদ দিলে অনেকের মত এটা আমারও গল্প। ফ্লাইট মিসজাতীয় রিস্কি কিছু না থাকলে ঘড়ির অ্যালার্ম অন করি না। অবশ্য সময়মতো এমনিতেই ঘুম ভেঙ্গে যায়। এর ব্যতিক্রম ঘটে উইকএন্ডগুলোতে। ভোর ৬টায় ঘুম ভাঙ্গে, গড়াগড়ি দিয়ে বড়জোর ৭টা পর্যন্ত যাওয়া যায়, সেকেন্ড স্পেল আর শুরু করা যায় না।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

অ্যালার্ম ছাড়া সময়মতো ঘুম থেকে ওঠা? কী করে পারেন?
জীবনে হয়নি আমার, হবেও না।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

কনফুসিয়াস এর ছবি

বোঝা গেল, এখানে আমরা অনেকেই তাহলে দীর্ঘশ্বাস-মিতা।
-----------------------------------
... করি বাংলায় চিৎকার ...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

দুঃখ-মিতাও!

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

ইফতেখার নূর এর ছবি

সবার গল্পই এক, ব্যাতিক্রম কে কেউ নেই??

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

আছে তো! তবে ব্যতিক্রমদের সংখ্যালঘু মনে হচ্ছে। হাসি

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

স্নিগ্ধা এর ছবি

মুজুদা (abv. of মুহাম্মদ জুবায়ের দাদা - যে নামে আমাকে ডাকতে বলা হয়েছে হাসি ) - আমার মা খুব আক্ষেপ করে বলতো যে আমার 'কালকে' নাকি কালও আসেনা, পরশুও আসেনা, কোনদিনই আসেনা - তাই এই বিচক্ষণ আমি এখন নিজেকেই বলি "হুহ, আমার কালকে মানে যে কি তা তো জানিই!"

পাপীদের উদ্ধারের সম্ভাবনা থাকে -
জ্ঞানপাপীদের কি উপায় ? মন খারাপ

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

'ইচ্ছে' নামে শীর্ষেন্দুর একটা গল্প আছে, আমার খুব প্রিয়। গল্পের প্রধান চরিত্র সাঁটুলাল মানুষ ভালো, কিন্তু নিজের অজান্তেই তার হাত দুটো এটা-ওটা নিজের করে নিয়ে নেয়। তখন সে মনে মনে ভাবে, এই যে জিনিসটা আমার হাতে চলে এলো, এতে কি ভগবানের ইচ্ছেও নেই?

এইসব ছিঁচকে চুরিতে যখন তার খুব অনুশোচনা হয় তখন সাঁটুলাল এই বলে প্রতিজ্ঞা করে, এই শেষ পাপ-তাপ বাবা, কাল থেকে ভালো হয়ে যাবো!

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

স্নিগ্ধা এর ছবি

হায় হায় মুজুদা - শেষে সাঁটুলালের দশা হবে আমাদের ?!
গল্পটা আমার প্রায় মুখস্থ - সেজন্যই বেশ চিন্তিত হয়ে প'লাম। সাঁটুলালের মতো ভেগে যাওয়া বউয়ের সুখে সুখী হওয়ার মত মন আগে বানিয়ে নিই, তাপ্পর দেখি দিয়াশলাই দিয়ে কান খোঁচাতে খোঁচাতে 'কালকের' ভবিষ্যৎ চিন্তা করা যায় নাকি হাসি

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

এই গল্পটা আমারও একসময় প্রায় মুখস্থ ছিলো। চিন্তিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। সাঁটুলাল লোক খারাপ না। হাসি

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

তানভীর এর ছবি

ছোটবেলায় আমি যখন-তখন ঘুমিয়ে পড়তাম। আমাকে হয়ত বাসায় রেখে সবাই একটু বাইরে গেল। আমি কখন ঘুমিয়ে পড়েছি আমি নিজেও জানি না। ওদিকে বাসার দরজা ধাক্কিয়ে ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে, কলিংবেল বেজে বেজে নষ্ট হবার পথে; কিন্তু ভেতরে আমার কুম্ভকর্ণের ঘুম ভাংছে না। দীর্ঘ সময় পরে ঘুম ভেঙ্গে যখন বাস্তবে ফিরে আসতাম, তখন খুবই লজ্জিত হতে হত। বকা-ঝকাও এ নিয়ে কম খাই নি। তখন খুবই দুরন্ত ছিলাম। সারাদিন দস্যিপনা করে, বনে-বাদাড়ে ঘুরে বাসায় ফিরে আমি একদন্ড জেগে থাকতে পারতাম না।

কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে উঠে আমার সেই ঘুম উধাও হয়ে গেল। রাত জাগা হয়, ঘুমও আসে না। ঢাকায় যাবার পরে নতুন উপসর্গ যোগ হল শ্বাসকষ্ট। রাত হলে শ্বাসকষ্ট বাড়ে, বিছানায় উঠে বসে থাকি রাতের পর রাত। একটা নতুন জিনিষ বের করলাম। প্যারাসিটামল খেলে আমার ভাল ঘুম হয়। ব্যাপারটা হয়ত পুরোটাই মানসিক। তবু যখন ঘুম দরকার, বিশেষ করে পরীক্ষার সময়, তখন প্যারাসিটামল খেয়ে ঘুমাতে যেতাম।

চিটাগাং-এ আমার কখনো শ্বাসকষ্ট ছিলো না, আমেরিকায় আসার পরে ওটাও আর নেই। এখন রাত জাগার একটা অজুহাত ইন্টারনেট। তবে এখন অনেক ঘুম হয়, যখন ছাত্র ছিলাম সপ্তাহ জুড়ে ম্যারাথন ঘুম দিতাম। সকালে ঘুমাতে আমারো খুব ভালো লাগে এবং আমার ধারণা অন্তত বেলা বারটার আগে আমার মাথা সাধারণত কাজ করে না। তাই সকালটা খুব ভালো করে ঘুমাই, কাজকর্ম সব দিনের বাকী সময়ের জন্য রাখি। তবে ছোটবেলার সেই নিশ্চিন্ত ঘুমগুলো এখনো খুব মিস করি।

আর যা করতে চাই, তা করা হয় খুব ধীরে ধীরে। আপনার মত আগামীকালের আশাটাকে জাগিয়ে রাখি সবসময় হাসি ওটা আছে বলেই তো বেঁচে থাকা।

মন্তব্যটা মনে হয় খুব লম্বা হয়ে গেল মন খারাপ

= = = = = = = = = = =
তখন কি শুধু পৃথিবীতে ছিল রং,
নাকি ছিল তারা আমাদেরও চেতনায়;
সে হৃদয় আজ রিক্ত হয়েছে যেই,
পৃথিবীতে দেখ কোনখানে রং নেই।

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

ঘুম জিনিসটা আমারও খুব প্রিয়। হয়তো যথেষ্ট পাওয়া হয় না বলেই। আপনার মতো প্রাণভরে যদি ঘুমাতে পারতাম! তবে একটা কথা স্বীকার করা দরকার - আমি না-ঘুমানোর অজুহাত খুঁজি। ছোটো বাচ্চারা হয়তো যেমন ভাবে, ঘুমালেই কিছু একটা মজা ফস্কে যাবে!

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার আব্বার আরলি টু বেড আরলি টু রাইজ শুনে আমার মারাত্বক হাসির কথাটা বলতেই হচ্ছে। লক্ষ্য করবেন হয়ত আমি আমার মন্তব্যে আব্বার নাম টানিনি, কেননা তিনিও আরলি গ্রুপের লোক, আমাদের না..হাহ হা। ঘড়ি বাধা জীবন তার। আটটা বাজতেই ডিনার,রাত নটা বাজতেই তার ঘুমানো চাই, তা সে যাই হোক না কেন। মাঝে সাঝে অবশ্য তা দশটা হত, এর বেশী কোন মতেই না। সকালে ৬টায় উঠে নামাজ পড়ে হাটেত যাওয়াও তার রুটিন। ডায়বেটিসে এটা কাজেও দেয়। মজার কথা হচ্ছ, তিনি মাঝরাতে(তার জন্য) উঠে বাথরুমে জান, তো বাথরুমে যাবার কড়িডোরের মাঝে আমাদের ডাইনিংরুমটাও পড়ে, প্রায় প্রতি রাতেই তাই তিনি আমাদের হাস্যোজ্জল দেখে ভুল করে ভেবে নিতে চান সকাল হয়ে গেছে..আসলে হয়ত ঘড়িতে মোটে ১ টা, তার তো আধা ঘুম পুর্ন..হাহ হা।

তবে আমাদের এই আড্ডায় কখনও হস্তক্ষেপ করতেন না।

আমরা ভাইয়রা ও তার প্রায়চিত্ত করে যাচ্ছি চোখ টিপি

(রন্টি চৌধুরী)

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।