ফোন এসেছে। কেউ একজন সাঈদকে চায়। আসাদ মোটামুটি অনুমান করেছে, তবু জিজ্ঞেস করে, কোন সাঈদ? এ বাসায় দু’জন সাঈদ আছে।
সৈয়দ আসাদুল আলমের খোঁজে ফোন করা হয়েছে জেনে অকম্পিত গলায় বলে দেয়, এই মুহূর্তে সে এখানে নেই। কোনো মেসেজ থাকলে বলো, ফিরলে জানিয়ে দেবো।
ওপাশ থেকে মহিলা নিজের নাম-পরিচয় ঘোষণা করে, কোন প্রতিষ্ঠানের হয়ে ফোন করা হচ্ছে তা-ও জানায়। তারপর সামান্য বিরক্তি-মেশানো গলায় বলে, আগেও অনেকবার মেসেজ রেখেছি। জানি না সে মেসেজগুলো পাচ্ছে কি না, কিন্তু তার কোনো সাড়াশব্দ আমরা এখনো পাইনি। তুমি কি দয়া করে তাকে জানাবে, বিষয়টা খুবই জরুরি এবং অবিলম্বে তার সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হওয়া দরকার?
নিশ্চয়ই তাকে বলবো ফোন করতে। নম্বরটা বলো, আমি লিখে নিচিছ।
নম্বর আসাদের জানা আছে, লেখার দরকার নেই। কাগজ-কলমও হাতে নেয়নি সে। ফোনের ওপাশ থেকে কেউ তাকে দেখতে পাচ্ছে না। কেন ফোন আসছে, তা জানা আছে। নম্বর লেখার অভিনয় সেরে মহিলাকে প্রথামতো ধন্যবাদ দেয়। ফোন রেখে চুপ করে বসে থাকে।
এ বাসায় দু’জন সাঈদ, তা অবশ্য ভুল নয়। আলমও দু’জন। আসাদের পুরো নাম সৈয়দ আসাদুল আলম, অন্যজন চার বছরের বড়ো চাচাতো ভাই সৈয়দ রশিদুল আলম। কেউ মিস্টার আলমের সঙ্গে কথা বলতে চাইলেও কোন আলমকে চাই, এরকম ব্যাখ্যা চাওয়ার সুযোগ আছে। আমেরিকায় প্রথম নামে পরিচিত হওয়াই প্রথা এবং এ দেশীয়রা সৈয়দ উচ্চারণ করতে জানে না, ফলে এ বাসায় একজোড়া সাঈদ। পারিবারিক পদবী যে নামের শুরুতে থাকতে পারে, তা এদের অভিধানে নেই। বুঝিয়ে বললেও বুঝতে পারবে না।
সুতরাং চুপচাপ মেনে নিয়ে দু’জন সাঈদ অথবা মিস্টার আলম হয়ে থাকতে অসুবিধা নেই। বরং সুবিধা কিছু পায় আসাদ। এই যেমন এখন। ফোনে সাঈদ নামের একজনকে চাইলে কোন সাঈদকে চাই জিজ্ঞেস করে খানিকটা প্রস্তুতি নেওয়ার সময় পাওয়া যায়।
নিজের মুখে বলতে হলো সে বাসায় নেই। নতুন কিছু নয়। অনেকদিন ধরে এসব সামলাচ্ছে। প্রথম প্রথম এরকম সময়ে রীতিমতো তোতলা হয়ে যেতো, উল্টোপাল্টা সব কথা মুখে চলে আসতো। ক্রমে সে পেশাদারী দক্ষতা অর্জন করেছে। এইসব ক্ষেত্রে যতোক্ষণ সে নিজের পরিচয় স্বীকার না করছে, ফোন করার কারণ জানানো হবে না। আইনের নিষেধ। ব্যক্তিগত বা আর্থিক লেনদেন বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ছাড়া অন্য কারো সঙ্গে আলোচনা করা যায় না, এমনকি তার বউয়ের সঙ্গেও নয়।
সে আসাদ নয় বলে নিজের পরিচয় অস্বীকার করলে সুবিধা এই যে, অপ্রিয় কথাগুলো বার বার শুনতে হয় না। না শুনে যে ভালো বোধ করে, এমন নয়। ভাবতে না চাইলেও ব্যাপারটা নেই হয়ে যাচ্ছে না, মিটেও যাবে না।
গতমাসে ক্যারলের জন্মদিন গেছে। একটা ডায়মন্ড বসানো ঘড়ি কিনে দিতে হয়েছে। ক্যারল নিজে পছন্দ করেছিলো। সাড়ে তিনশো ডলারের ঘড়ি কেনার সামর্থ্য থাক আর না-ই থাক, জন্মদিনে তোমার সাদা চামড়ার বউ মুখ ফুটে একটা উপহার চাইবে আর তুমি দেবে না, তাই কি হয়? না দিলে আসাদের পৌরুষ আহত হয়, সামর্থ্যে কুলিয়ে উঠতে না পারলেও বায়নাটি পূরণ করা কর্তব্য।
ওয়ালেটে ক্রেডিট কার্ড আছে কয়েকটা। সবগুলোই এখন শুধু পকেটশোভা, কাজে লাগানোর উপায় নেই। আমেরিকান এক্সপ্রেসের বিল দেওয়া হয়নি দুই মাস, ফোনে এবং চিঠিতে নিয়মিত তাগাদা আসছে। বকেয়া শোধ না করা পর্যন্ত তা ব্যবহার করা যাবে না। ভিসা-মাস্টার কার্ডগুলোতেও চার্জ করার অবস্থা নেই, ব্যাংকে মোটে শ’খানেক ডলার। চেক লিখে দিলে সেটি তার ব্যাংকে ক্যাশ হওয়ার জন্যে যেতে দু’তিনদিন সময় লাগবে, সেই ভরসায় ঘড়ি কিনে ফেলেছিলো চেক লিখে। কীভাবে জানা নেই, তবু এই দু’তিনদিনের মধ্যে ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়ার একটা ব্যবস্থা করা যাবে বলে তার বিশ্বাস হয়।
টাকার জোগাড় হয়নি। দু’বার চেক বাউন্স করার পর ব্যাংকের চিঠি, অবিলম্বে টাকা জমা দাও। দেবে কোথা থেকে, টাকা থাকলে তো! দিনকয়েক পর ঘড়ির দোকানের কালেকশন ডিপার্টমেন্ট থেকে ফোন আসতে শুরু করে। খুব শিগগির মিটিয়ে না ফেললে তারা স্থানীয় কাউন্টি অফিসে রিপোর্ট করে দেবে জানিয়েছে। তখন হট চেক লেখার দায়ে ওয়ারেন্ট ইস্যু হবে।
এই ধরনের ওয়ারেন্টে তাকে ধরার জন্যে পুলিশ বাসায় আসবে না ঠিকই, কিন্তু রাস্তায় কোনো কারণে থামালে তুলে নিয়ে হাজতে ভরে দেবে। হাজতবাস কখনো করতে হয়নি, তবে আগেও বার দুয়েক ওয়ারেন্ট ইস্যু পর্যন্ত যাওয়ার অভিজ্ঞতা তার হয়েছে। সেইসব সময়ে আতঙ্ক ও উদ্বেগ নিয়ে চলাফেরা করতে হয়। রাস্তায় পুলিশের গাড়ি দেখলে হৃৎস্পন্দন বেড়ে যায়, এই বুঝি থামতে বললো।
এখন উপায় কি, ব্যবস্থা করতে হবে। কিন্তু কীভাবে? কী করা যায়, আসাদের মাথায় আসে না।
মন্তব্য
-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!
অজ্ঞাতবাস
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!
নতুন মন্তব্য করুন