মাসিক কিস্তির টাকা দিতে না পারায় আসাদের শখের মাজদা আরএক্স-সেভেন গাড়ি গেছে, এখন আছে একটা পুরনো হোন্ডা সিভিক। একবার বাসাভাড়া বাকি পড়লে অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সের লোকজন এসে টিভি-ভিসিআর আটকে রেখেছিলো, রশিদ টাকা দিয়ে উদ্ধার করে আনে। আসাদের টাকাপয়সার টানাটানি, এতোসব ঝামেলা দেখে রশিদের কষ্ট হয়, আহা, কোন বাড়ির ছেলে বিদেশে কীভাবে আছে। দেশে তার এই অবস্থা কল্পনা করা যেতো?
আগে কোনোদিন বোঝা যায়নি, এখন রশিদ টের পায়, আসাদ আসলে কারো পরামর্শ কানে তোলার ছেলে নয়। সে যা করবে ঠিক করে রেখেছে, তা-ই করবে।
তবু আসাদকে সে আজীবন স্নেহ করে এসেছে, তাকে দেখে এখন তার বুক শুধু মায়ায় পরিপূর্ণ হয়ে যায়। ক্ষমতা থাকলে সে তাকে এই চক্করের ভেতর থেকে টেনে বের করে আনতো। কিন্তু তার আর সাধ্য কতোটুকু? এই দুর্বলতাটুকুও সে যথাসম্ভব আড়াল করে রাখে, টের পেলে আসাদ তার ওপর আরো বেশি নির্ভর করতে শিখবে। সেটা ভালো নয়। নিজের ভবিষ্যতও রশিদকে ভাবতে হয়।
কেনটাকি ফ্রায়েড চিকেনে বসে খেতে খেতে রশিদ জিজ্ঞেস করে, ক্যারলের সাথে আলাপ করছিলি?
আসাদ জানে, কী জানতে চায় রশিদ। তবু না বোঝার মতো মুখ করে বলে, কীসের আলাপ?
তর গ্রীন কার্ডের।
না, করা হয় নাই।
আর কবে করবি? এই কইরা দুই বছর কাটাইয়া দিলি। আইজ পর্যন্ত তর অ্যাপ্লাই করাই হইলো না। এতোদিনে তর পার্মানেন্ট কার্ড হইয়া যাওয়ার সময় হইয়া যাইতো।
আসাদ চুপ করে থাকে। ভাজা মুরগির টুকরো মুখে দিয়ে চিবায়। প্যাকেটের মধু বিস্কিটে মাখায় ধীরেসুস্থে। ঠাণ্ডা পেপসির গ্লাসে চুমুক দেয়। কী বলবে সে?
বিয়েটা তার সত্যিকারের, কাগজ-কলমের বউ নয় ক্যারল। চেইন রেস্টুরেন্ট অ্যাপলবী’জ-এর ম্যানেজার তখন আসাদ, ক্যারল সেখানে ওয়েট্রেস হিসেবে ঢুকেছিলো। ইলিনয়ের ছোটো এক শহর থেকে সদ্য বড়ো শহরে আসা ক্যারল তখন পায়ের নিচে মাটি খুঁজছে। সুন্দরী ছিপছিপে নীলনয়না আসাদের নজরে পড়ে যায়। গায়ের রংটাই শুধু শ্যামলা, পোশাক ও ফ্যাশন সচেতন আসাদ দেখতে অত্যন্ত সুপুরুষ। ছয় ফুট উচ্চতার সঙ্গে মানানসই স্বাস্থ্যের দ্যুতি। প্রেম জমে উঠতে সময় লাগেনি।
ওকলাহোমা রাজ্যের ডুরান্টে লেখাপড়া করার নিমিত্ত আসাদকে এ দেশের ভিসা দেওয়া হয়েছিলো। সেই শর্ত ভঙ্গ করে পড়াশোনা ছেড়ে দিলে ইমিগ্রেশন থেকে ডিপোর্টেশনের চিঠি আসে। তাকে চলে যেতে বলা হয়। এসব নিয়মরক্ষার চিঠি, সত্যি সত্যি কেউ এসে ঘাড় ধরে বহিষ্কার করবে না।
তবু এক ধরনের মানসিক চাপ তো বটে। কাঁটা হয়ে থাকতে হয় সারাক্ষণ, কোনো কারণে ইমিগ্রেশন মামুর হাতে পড়ে গেলে তারা সরাসরি প্লেনে তুলে দেবে। তখনই ডুরান্ট ছেড়ে ডালাসে আসা, অন্তত ঠিকানা বদল করে লুকিয়ে থাকা হলো। ক্যারলকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত আসাদ দ্রুতই নিয়েছিলো। বউ হিসেবে ক্যারল তার গ্রীন কার্ডের আবেদন করতে পারবে, ডিপোর্টেশনের চিঠি নিয়ে তখন আর মাথা ঘামাতে হবে না।
বিয়ের পরে নতুন ঝামেলা। ক্যারলের সঙ্গে কথা বলবে ভাবলেই আসাদের মনে হতে থাকে, ক্যারল তাকে হয়তো চালবাজ, ঠক ভেবে বসবে। যদি ভাবে, ভালোবাসা নয়, গ্রীন কার্ডের মতলবেই তাকে বিয়ে করেছে আসাদ! তা যে সত্যি নয়, কী দিয়ে প্রমাণ করা যাবে?
একসময় ভেবেছে, কিছু সময় গেলে ক্যারল বুঝবে আসাদের মধ্যে চালাকি কিছু ছিলো না এবং নিজে উদ্যোগী হয়ে গ্রীন কার্ডের জন্যে চাপ দেবে আসাদকে।
মুশকিল হলো, গ্রীন কার্ড জিনিসটা কী এবং একজন বিদেশীর যে তা দরকার, সে বিষয়ে বিন্দুমাত্র ধারণা ক্যারলের নেই। এই সরলতাও আসাদকে বিপদে ফেলে রেখেছে, ফলে দুই বছর কেটে গেছে, আলোচনার সূত্রপাত করা সম্ভব হয়নি।
আসাদকে চুপচাপ দেখে রশিদ বলে, নিজে না পারলে আর কাউরে দিয়া আলাপ করান যায় না?
সেইটা ভালো দেখায় না।
তর নিজে কওনের অসুবিধা আমি বুঝি। তুই চাইলে আমিও অর সাথে কথা কইতে পারি, আমি তো আর বাইরের মানুষ না।
দেখি, কি করা যায়।
দেখতে দেখতে তো অনেক সময় গেলো। রশিদ চিকেনে কামড় বসায়।
এই প্রসঙ্গ চাপা দেওয়ার উপায় আসাদের জানা আছে। অব্যর্থ সেই ওষুধ সে এখন ব্যবহার করে। জিজ্ঞেস করে, আপনের কেসের কদ্দূর কী হইলো?
গত বছর রশিদ টাকাপয়সার শর্তে চুক্তির বিয়ে করে। নিজেরই ব্যবস্থা, আগে থেকে আসাদ বা আর কাউকে জানায়নি। কৃষ্ণকায়া দরিদ্র মেয়ে ভ্যানেসা দেড় হাজার ডলারের শর্তে রাজি হয় - বিয়ের সময় নগদ পাঁচশো, গ্রীন কার্ডের আবেদনের সময় আরো পাঁচশো, বাকিটা দু’বছর পর ইমিগ্রেশনে দ্বিতীয় দফা ইন্টারভিউয়ের পরে।
বিয়ের রেজিস্ট্রেশনের দিনে ভ্যানেসা এক হাজার দাবি করে বসে। শর্ত স্মরণ করিয়ে দিলে মুখ বাঁকা করে জানায়, এই মুহূর্তে হাজার ডলার না দিলে সে ইমিগ্রেশনে যাওয়া দূরে থাক, ভুয়া বিয়ের কথা ফাঁস করে দেবে।
মন্তব্য
আগে যিনি লেখার সঙ্গে সুন্দর ছবিটি জুড়ে দিয়েছিলেন গোপনে, এবারের দায়িত্বও তাঁর ওপরই বর্তাচ্ছে।
-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!
বস একটা ছোট গল্প লেখার ফিচার আছে। চালু করব? আপনি ব্যবহার করতে পারতেন।
====
মানুষ চেনা দায়!
নয় কেন? @ মাহবুব মুর্শেদ। শুধু আমার কেন, অনেকেরই, এমনকি আপনারও দরকার।
উপন্যাসের জন্যে থাকলেও কাজে লাগবে যাঁরা লিখতে চান।
-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!
একটা ফীচার আছে কোলাবোরেটিভ বুক রাইটিং। ওইটাও তাহলে এনাবল করি।
====
মানুষ চেনা দায়!
নতুন মন্তব্য করুন