সচলে আমার প্রথম লেখা। হাত কাঁপছে। সাত বছর ধরে সচল পড়ছি। লেখার সাহস করিনি কখনো। কত বড় বড় লেখক এখানে! কিন্তু 'নারী সপ্তাহের' আহবানে আজ আর পাঠক হয়ে বসে থাকতে পারলাম না। বানানে খুব কাঁচা আমি, বিশেষ করে 'র' আর 'ড়'। সময় অভাবে অভিধান দেখে ঠিক করে নিতে পারলাম না বলে দু:খিত। তাই সম্ভব হলে বানান ভুলগুলো ধরিয়ে দিতে তুলিরেখাকে অনুরোধ করব।
যৌন আক্রমনের ঘটনাগুলো কমবেশি একই রকম। আমারা মেয়েরা নিজের বাড়িতে, পড়শীর বাড়িতে, বাসে-ট্রেনে, কাছের বা দূরের মানুষ দ্বারা কম বেশি একই রকমের যৌন আক্রমনের শিকার হই। নববষর্ের ন্যাকার জনক ঘটনা এবারে একরকমের আলোরণ তৈরী করেছে। আমার মনে হয়, দলগত যৌন হামলার কারণ বিশ্লেষণ করা ভীষণ প্রয়োজন। ব্যক্তিগত যৌন আক্রমনের ঘটনা গুলোর মধ্যে সেই দলগত হামলার কারণের কিছুটা আঁচ পাওয়া যেতে পারে। তাই এখানে আমার একটি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা লিখে, যৌন আক্রমনের অন্তত একটি কারণ বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করব।
আমার জন্ম একটি স্বচ্ছল শিক্ষিত পরিবারে। পারিবারিক অহং বোধ ব্যক্তি মানুষ হিসেবে আমার না থাকলেও, আমি সারা জীবন শুনে ও দেখে এসেছি আমার বৃহত্তর পরিবারের শ্রেষ্ঠত্বের গল্প। যেখানে অনেকেই মুক্তিযোদ্ধা, আমার মা সহ অধিকংশ নারীই সরকারি/বেসরকারি চাকরীজীবি, এমনকি কেউ কেউ বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সক্রিয় সদস্য ছিলেন ও আছেন।
আমার বয়স যখন চার বছর। আমি আমার তেইশ বছরের (আন্দাজ) কাজিনের যৌন লালসার শিকার হই। লোকটির যৌনাঙ্গ আমার শিশু যোনিতে প্রবেশ করেনি, কিন্তু স্পশর্ করেছে, একই সময়ে একের অধিকবার। আমি আজও জানিনা যৌন আক্রমনের বিভিন্ন তড়িকায় একে কি ধষর্ণ বলে গণ্য করা হবে কি না? বয়স কম থাকলেও সম্পূণর্ ঘটনাটি (ঘটনার পূবর্ে আমি কোথায় ছিলাম, কি করছিলাম এবং ঘটনা ঘটার সময়) পুঙ্খানূপুঙ্খ আমার মনে আছে। হতে পারে ব্যাপারটা আমার সাথে কেন ঘোটল আমি সবসময় তা বোঝার চেষ্টা করেছি তাই। ঘটনা ঘটার পরে ওই লোকের ঘর থেকে আমি কি একা বের হয়ে আসি, নাকি গৃহকর্মী আমাকে বের করে নিয়ে আসেন সেটা আর মনে করতে পারি না। ঘটনা কি ঘন্টা ব্যপি ঘটেছে না কি অল্প সময়ের জন্য, সেটাও মনে নেই (ওই বয়সে কি আর আমার সময় জ্ঞান ছিল!)। মনে পড়ে ওই সময়টাকে খুব দীঘর্ মনে হয়েছিল। কি ঘটছে ব্যপারটা বুঝতে আমি কৌতুহলি ছিলাম। কেন ঘটছে সেটাও বুঝতে চেষ্টা করছিলাম। তবে যা ঘটছে সেটা যে স্বাভাবিক কিছু না, সেটা কেমন করে জানি তখনই টের পাচ্ছিলাম।
ছোট্ট আমার সাথে যে এমন একটা ঘটনা ঘটেছে, তা আমাদের বৃহত্তর পরিবারে জানাজানি হয়। যদিও ঠিক কতটুকু তারা জানতে পারেন আমার জানা নাই (আমরা যৌথ পরিরার ছিলাম না, সকলে হাঁটা দূরত্বে থাকতাম)। এই ঘটনাকি আমি নিজেই কাউকে বলি, নাকি অনেকদিনের গৃহসহকারী অন্যদের বলেন সেটাও স্পষ্ট মনে করতে পারি না। তবে স্পষ্ট মনে আছে জানাজানির পরে আমার মা বলেন "তোমর সাথে এমন করসে আমাকে বল নাই কেন? চল তোমাকে সাবান দিয়ে ধোয়ায় নিয়ে আসি।" আমি খুব ভয় পাই ও মনে করি খুব খারাপ কিছু হয়েছে। আরো ভয়ে কুঁকরে যাই যখন সাবান দিয়ে আমার প্রাইভেট পাটসর্ ধোয়া হয়। পরবতর্িতে আমার মার সাথে আক্রমণকারীর মার তীব্র বাকবিতন্ডা শুনতে পাই। তখন আমি আরো ভয় পাই ও নিজেকে দোষারোপ করি, যে আমার জন্যই হয়ত এমন গন্ডোগোল লাগল! পরে একটু বড় হলে গৃহসহকারীর কাছে শুনেছি আক্রমণকারী আমার মার কাছে মাপ চায়। এছাড়া আজ পর্যন্ত পরিবারের কেউ আমাকে এব্যপারে কিছু জিজ্ঞেস করেনি বা এ নিয়ে কেউ আর কোন কথা বলেনি। যেন এমন কিছুই কখনও হয়নি।
সময়ে সবাই ব্যপারটা ভুলে গিয়ে 'সুখে শান্তিতে' (!) বসবাস করতে থাকে। এমনকি পাঁচ অথবা ছয় বছর বয়সে ওই লোকের হলুদে শাড়ি পরা ছবিও আমার আছে। তবে মনে পড়ে বিয়ের পরদিন নতুন বউ দেখতে গেলে, আমার হঠাৎ ইচ্ছা করে মেয়েটাকে তার স্বামীর কৃতকমর্ের কথাটা বলতে, কিন্তু বলতে পারিনি। প্রথমত সে যদি মনে করে আমি বানিয়ে বলছি সেই লজ্জায়। আর দ্বিতীয়ত সে যদি বিয়ের পরদিনই সংসার ছেড়ে চলে যায় আর সবাই আমাকে দোষারোপ করে সেই ভয়ে। একসময় আমরা ওই এলাকা ছেড়ে চলে আসি আর ওই লোকটি বউ নিয়ে আমেরিকা চলে যায়। আর সমস্ত ঘটনাটা এতদিন ধরে ঠিক একটা শুশুকের মতন, আমার মনে ভেসে ওঠে আবার ডুবদেয় আবার ভেসে ওঠে। কিন্তু কাউকে সেকথা বলি না। এ যেন এক নিসিদ্ধ অধ্যায়।
২০০৮ সালে, ওই লোকের নিউইয়কের্র ছোট্ট ফ্ল্যাটে যেখানে কিনা সে দুই মেয়ে ও বউ নিয়ে থাকে, মা সহ একরাত বেড়িয়ে আসি। সেই সময় ওই লোকের দুই টিনএজ মেয়ের দিকে তাকিয়ে আমি তাকে মন থেকে ক্ষমা করে দেই। কিন্তু তারপর আমার মধ্যে এক ব্যপক মানসিক পরিবর্তন আসে। আমি যাদেরকে আর সহজ ভাবে নিতে পারি না - তারা হোল আমার কাছের পরিবারবর্গ। ২০০৯ সাল থেকে একে একে তাদের সবার কাছ থেকে আমি দূরে সরতে থাকি। আমি কিছুতেই আর তাদেরকে ক্ষমা করতে পারি না। পেছনে তাকালে দেখি ছোটবেলার সেই 'নিষিদ্ধ অধ্যায়' আমার স্বভাবে, যৌন আচরণে, পুরুষকে বিশ্বাস করায়, কাউকে একান্তভাবে ভালবাসতে পারায়, বেশ প্রভাব ফেলে গেছে।
আমি মনে করি, যৌন আক্রমণের অন্যতম কারণ 'দ্বৈতাচার', অর্থাৎ 'দ্বৈত' আচরণ। জাতিহিসেবে আমরা বেশ 'ডাবল স্ট্যন্ডার্ড' নিয়ে চলি। যেটা যৌন আক্রমনের জন্য উর্বর ক্ষেত্র তৈরী করে। আমরা নারী স্বাধীনতার জন্য প্ল্যকার্ড নিয়ে রাস্তায় দাঁড়াই, অন্যদিকে ঘরে থাকা যৌন আক্রমণকারীর অন্যায়ে চোখবুজে থাকি। তাকে সামাজিক ভাবে ত্যাগ করা তো দূরের কথা, উল্টো তার সাথে হাত মিলিয়ে চলি। ঘটনা ধামা চাপা দেই। আক্রান্ত শিশু বা মানুষটার সাথে এমন আচরণ করি যেন সেটা তার দোষ, অথবা ব্যপারটা তার জন্যই খুব লজ্জার। এজন্য একসময় আক্রান্ত শিশুটি বা মানুষটিও ব্যপারটাকে আপাত দৃষ্টিতে 'কিছুই ঘটেনি' মনে করে। অথবা লজ্জার কারণ ভেবে নিজেকে দোষারোপ করে। অনেকেরই হয়ত ভীতরে ভীতরে মারাত্মক মানসিক ক্ষতি হয়ে যায়, খালি চোখে আমরা যেটা দেখতে পাই না।
ছেলে-মেয়ে নিবর্িশেষে পারিবারিক পরিধিতে নিরাপত্তা বিধানের প্রধাণ দায়িত্ব পরিবারের। কোন কারণে পরিবার তাতে ব্যর্থ হলে যেকোন মূল্যে পরিবারকে আক্রান্ত সদস্যটির পাশে থাকতে হবে। যৌন আক্রমন যতটা না শারীরিক তারথেকেও বেশি মানসিক। এসময় পরিবারের সমর্থন ছাড়া মানুষ ভঙ্গুর হয়ে পড়ে আত্মবিশ্বাসহীন হয়ে পড়ে। যেই পরিবার নিজের সদস্যদের উপর যৌন হামলার পরে পাশে দাঁড়াতে অক্ষম সেই পরিবার যত শিক্ষিতই হোক, শত ধিক্কার তাদের। একারণেই নববর্ষের যৌন হামলার ঘটনার পরে আমি রাষ্ট্রের বা ঢাবির ভিসির আচরণের চাইতেও, শারিরীক ও মানসিক ভাবে যে নারীরা আক্রান্ত হয়েছে তাদের পরিবারের আচরণ নিয়ে বেশি চিন্তিত ও সংকিত হচ্ছি। আশাকরি আর কেউ না হোক তাদের পরিবার যেন তাদের পাশে থাকে। তাদের পরিবার যেন তাদেরকে উল্টা দোষারোপ না করে। তারা যেন অন্তত তাদের মানসিক দু:খটা পরিবারের কাছের মানুষের সাথে ভাগ করে নিতে পারে। শুধু মাত্র প্রাতিষ্ঠানির শিক্ষা যৌন আক্রমণকে প্রতিহতো করতে পারবে না। এর জন্য চাই সাহসের সাথে 'দ্বৈতাচার' বা 'দ্বৈত-আচরণ' পরিহার।
মন্তব্য
"পেছনে তাকালে দেখি ছোটবেলার সেই 'নিষিদ্ধ অধ্যায়' আমার স্বভাবে, যৌন আচরণে, পুরুষকে বিশ্বাস করায়, কাউকে একান্তভাবে ভালবাসতে পারায়, বেশ প্রভাব ফেলে গেছে।"
এই স্মৃতি-ইতিহাস অবদমিত যৌনতার, বৃহত্তর পরিবার এবং আপনার চিহ্নিত দ্বৈতাচারের দেশ বাংলাদেশের অনেকের। এবং আমার জানামতে ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে উভয় লিঙ্গের।
তবে দরিদ্রদেশে জন্মগ্রহণ করায় আমরা কিছু স্ট্রিট-স্মার্টনেস অর্জন করি। ফলে হাঁসের মত দ্রুত ঝেড়ে ফেলতে পারি ডোবার নোংরা পানি। পশ্চিমাদেশে একটা শিশুকে এই ঘটনা যতটা কাবু করে ফেলে বাংলাদেশের ভুক্তভোগীরা বিষয়টাকে ততটা আমলে নেন না - এখন পর্যন্ত তাই দেখা যাচ্ছে।
শিশুবেলার এরকম মারাত্মক ঘটনা মানুষটার মননে বিরাট ছাপ ফেলে, যেমন আপনি বলেছেন তার ভালবাসা বা যৌনতার ধারণায় ও অভিজ্ঞতায় একরকম অস্বাভাবিকতা সৃষ্টি করে দেয়।
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
শতভাগ সত্য। এবং আমরা এই মানসিক জায়গাটা নিয়ে সাধারণত কোনো কথা বলি না। এর একটা কারণ বিচারহীনতা যার ফলে মানসিক বিষয়টি নিয়ে ভাববার সময় আমরা করে উঠতে পারি না।
পাঠক থেকে লেখক হিসেবে আবির্ভাবে অভিনন্দন। লেখা জারি থাকুক।
স্বয়ম
পড়লাম। কোনোকিছু বলার অভিপ্রায়ে মন্তব্য করছি না। শুধু বলার ছিল - বলুন, সবাই এইভাবে বলতে থাকুন। সবাই বলুক, প্রত্যেকটা কন্ঠ এই একই কথাগুলি তাদের মধ্য থেকে বলতে থাকুক...
ডাকঘর | ছবিঘর
আমাদের পরিবারগুলোর যে ভাল থাকার কী লোভ!
পরিবারের সন্তানেরা ভেঙে টুকরো হয়ে যাক, পরিবারের সম্মান বজায় রাখতে হবে। বাইরে যারা দেশ সমাজ নিয়ে প্রানপাত করেন, তারাই ঘরে এসে বদলে ফেলেন চেহারা।
লেখা যখন শুরু করেছেন একবার, থামাবেন না। লেখা চলুক এই বিষয়ে, অন্য কোন বিষয়ে, সব বিষয়ে।
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
পাঠক থেকে লেখা শুরু করায় এবং নারী সপ্তাহে অংশ গ্রহন করবার জন্য অভিনন্দন আপনাকে।
এই চরম সত্যিটাকে পাশ কাটানো আর উচিৎ হবে না।
কিভাবে এবিষয়ে পরিবারের সবার চোখ-কান খোলানো যায় তা ভাবতে হবে আমাদের।
টকশো গুলোতে আজাইরা প্যাচাল না করে এই বিষয়গুলো নিয়ে ধারাবাহিকভাবে বলে যাওয়ার ব্যবস্হা করা যেতে পারে।
এ বিষয়ে লেখালেখি বেশি বেশি করা যেতে পারে। যেকোন উপায়েই বিষয়টাতে সচেতনতা জাগিয়ে তোলা দরকার।
ভাবতেই বুকটা কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে ছোট্ট একটা মেয়েশিশু অতি শৈশবেই তার শৈশব খুইয়ে ফেলে কিছু বিকৃত মনষ্কের কারণে। আপনি লেখা থামাবেন না প্লিজ! শুভকামনা থাকলো।
নারী প্রশ্নে পুরো পৃথিবীর পুরুষজাতি একই আচরণ করে।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
হ
-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...
দ্বৈতাচার আমাদের ব্যক্তি-সামাজিক-রাষ্ট্রীয় জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রেই। আমাদের ধর্ম, সমাজ, সংস্কৃতি সবকিছুই এই দ্বৈতাচারে ইন্ধন দেয়, অপরাধীকে বর্ম দিয়ে আটকে রাখে।
একসময় শুনতাম, মেয়েটিকে "নষ্ট" করেছে এই ছেলে- মানে মেয়েটা নষ্ট হয়ে গেছে কিন্তু ছেলেটা ভাল। আরেকটা হচ্ছে, পরিবারের সম্মান-ইজ্জত ইত্যাদির জন্য মেয়েটির উপর অত্যাচারকে ঢেকে রাখা- এইসব দেখে কেউ বড় হলে সে কী করবে? কী রকম মানুষ হবে?
-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...
এক শিশুর সাথে এই ধরনের আচরনকে পশুর ব্যবহার ছাড়া আর কিছু বলা যায় না। আমার মনে হয় আমাদের সমাজে সেক্স নিয়ে হাস হাস চুপ চুপ আচরন এই ধরনের অপরাধকে বাড়িয়ে তোলে। সঠিক যৌনশিক্ষা বিষয়টির সমাধাণ করতে পারে বলে মনে হয়।
খুব কম শিশুই আমাদের এই যৌন-অবদমনের নরকে লোলুপ-কামুক আত্মীয়ের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। নাৎসীদের যেমন নব্বই বছর বয়সেও খুঁজে এনে বিচার করা হয়, এইসব অমানুষগুলো কাছের আত্মীয় হলেও, বুড়ো হলেও এদের মুখোশটা উন্মোচন করে দেওয়া উচিত। লজ্জ্বা নারীর ভূষণ বলে বলে নারীকে মানুষই হতে দেয়নি এই সমাজ, এইসব অন্যায়ের প্রতিবাদে কোন লজ্জ্বা নেই। আপনার উপর অন্যায় হয়েছে শিশুকালে, হচ্ছে এখনও, সেই অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার মধ্যে কোন লজ্জ্বা নেই।
অন্ধকার এসে বিশ্বচরাচর ঢেকে দেওয়ার পরেই
আমি দেখতে পাই একটি দুটি তিনটি তারা জ্বলছে আকাশে।।
- আমার মনে হয় না এটা ঠিক করলেন। আপনি যদি তাদের সামনে ঐ জানোয়ারের মুখোশ খুলে দিতেন তাহলে ঐ মেয়েগুলো বুঝতো বাস্তবটা কী। তাছাড়া তারা নিজেরা অমন কোন ঘটনার শিকার হয়ে থাকলে সেটাও তখন বের হয়ে আসতো। এবং ঐ মেয়েগুলো তখন তাদের সন্তানদের বা অন্য শিশুদের এমন জানোয়ারদের হাত থেকে বাঁচার উপায় শেখাতে পারতো।
আমি তো ঔচিত্যবোধের কথা বললাম, কিন্তু বাস্তবতা হয়তো ভিন্ন। হয়তো আপনার পরিস্থিতিতে পড়লে আমিও আপনার মতোই আচরণ করতাম।
ভালো থাকবেন।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
একবার যখন লেখা শুরু করেছেন আর থামাবেন না। লিখে যান আর যখনই অন্যায় দেখবেন প্রতিবাদ করুন, রুখে দাঁড়ান।
অনেক শুভকামনা রইল।
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'
এইমাত্র মনে পড়লো, আপনি যে ঘটনার কথা বললেন, সেরকম ঘটনা আমি আমার ছেলেবেলায় চোখের সামনে ঘটতে দেখেছিলাম একবার। খুবই ক্ষীণভাবে মনে আছে। আমি নিজে তখন ছয় সাত। অনেক কিছু ভুলে গেলেও ওটা ভুলিনি। সেই কুকর্মের ছেলেটার বয়স দশও হবে না। তবু কী করে সে ওটা করছিল, এখনো আমার মাথায় আসেনা। আমি হঠাৎ গিয়ে না পড়লে কি ঘটতো জানি না। অবাক ব্যাপার কি জানেন, ওই পরিবারটি এলাকার সবচেয়ে সম্ভ্রান্ত পরিবারের একটি, এবং সেই ছেলেটিও এলাকার সবচেয়ে ভদ্র নম্র মেধাবী হিসেবে পরিচিত এবং বড় হয়ে খুবই উচ্চশিক্ষিত হয়েছে এবং সমাজে বিশাল নাম ডাক তার এখন, অনেক মহতী প্রকল্পের সাথে জড়িত। যে কর্ম করেছে তার বিপরীত শ্লোগান তার প্রতিটা বাক্যে। অথচ আমি জানি সে কতটা ভণ্ড। আমার সাথে তার এখনো সামাজিক অনুষ্ঠানে দেখা হয়, কিন্তু আমি কখনো মুখফুটে বলতে পারিনি, সেই ঘটনাটা কেন ঘটাচ্ছিল সে। পৃথিবীতে এত বিপরীত চরিত্রের মানুষ, কল্পনাও করা যায় না!
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
ভদ্রতার মুখোশ পড়ে থাকা এই জানোয়ারদের আসল রূপ উন্মোচন হওয়াটা খুব দরকার। এমন একটা ঘটনা আমি অনেকদিন আগে ভিকটিমের মুখেই শুনেছিলাম। ঘটনার সময় তার বয়স ছিল সারে তিন কি চার!! এইসব ঘটনা অহরহই ঘটে। প্রায় সবাই "লোকে কি বলবে" ভেবে লুকিয়ে রাখে। যারা একটু বলে যায় তাদেরকে বাস্তবিকই লোকে বলে "তোমার সাথেই কেন এমন হয় "
ব্লগবাড়ি । ফেসবুক
ঠিক বলেছেন।
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
নীর সন্ধানীর কথায় মনেপড়ে গেল আরেক ভন্ডের কুকীতর্ির কথা, এখন বাংলাদেশের ইউএনডিপিতে চাকরী করে। সে ছিল ডিভোর্স, ভাইয়ের বাড়ি থাকত কিছুদিন (৭/৮ বছর আগের কথা বলছি)। সেখানে ১৫/১৬ বছরের গৃহকর্মীকে পোটিয়ে ঘন ঘন শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে অন্ত:সত্বা করে ফেলে। পরে আর কি ওই বাচ্চা মেয়েটাকেই তো এব্রোসন করিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আর ওই জঘন্য লোকটা আবার বিয়েটিয়ে করে ভালমানুষের মুখোশ এটে সুখে সংসার করছে।
আসলে পরিবারের সদস্যদের দ্বারাই যখন যৌন নিপিরণ হয় তখন এর প্রতিবাদ করতে প্রয়োজন প্রচন্ড সাহস, আত্মসচেতনতা, দূরদৃষ্টিতা। বলা যতটা না সহজ করা ততটাই ঝটিল।
আমিও একই ভাবে ৪/৫ বছর বয়সে দূর সম্পর্কের চাচার দ্বারা নিগৃহীত হয়েছিলাম। আমি ঠিকমতো কিছু বুঝিনি, কাউকে বলাও হয়নি। কিন্তু সেই ভয়াবহ জিনিস আমি যখন বুঝতে শিখেছি,আমার মনে গভীরতম দাগ ফেলেছে, আমি সেই দাগ আজো মুছতে পারিনি।নিজেই অসুস্থ হয়ে যাই ওই ভেবে, মানুষ কিভাবে এতটা অসুস্থ হতে পারে।মানসিক ভাবে বিকলাঙ্গ হতে পারে
যখন ইউনিভার্সিটি তে পড়ি,এক সুদর্শন তরুন রাস্তা দিয়ে যাবার সময় রিকশায় বসা আমাকে সিগারেট এর ছ্যাকা দিয়ে গিয়েছিল,এত স্বল্প সময়ের ঘটনা, কিছু বুজে উঠার আগেই ঘটেছিল।আজো সিগারেট সহ্য করতে পারিনা,গন্ধে বমি চলে আসে।
এই ঘটনাগুলো ভিক্টিমকে যে মানসিকভাবে কতটা দুর্বল করে দেয় সারা জীবনের জন্য। অশুভ, অশুচি বোধ ঘিরে রাখে চিন্তা ভাবনাকে অনেক অনেক সময় পর্যন্ত। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় এর ফল হয় এমন যে এরকম বিকৃত যৌন আচরণকেই তারা স্বাভাবিক ধরে নেয় এবং অন্য কারও উপর নিজের লালসা মেটাতে যায়। বিশেষ করে কিছুদিন আগে ইউ এন এর একটা জরিপের ফলে দেখা গিয়েছিল বাংলাদেশের ১০ জন ধর্ষকের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নিজে ছোটবেলায় ধর্ষিত হয়েছে। শুধু মেয়েশিশু নয়, এর থেকে বুঝা যায়, ছেলেশিশুরাও এসব জন্তুর হাত থেকে রেহাই পায় না।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
শিক্ষত, চাকুরীজীবী, প্রগতিশীল আর প্রতিবাদী মায়ের সন্তান আমি। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমার যে নিজের উপর যৌন নিপীড়নের মোটা দাগে কোন প্রতিবাদ করতে পারিনি আর আভিযোগ করেও পরিবারের কাছ থেকে উল্লেখযোগ্য কোন সহযোগিতাও পাইনি।
জীবিকার জন্য ৯টা-৫টা অফিস শেষে সন্ধ্যা বেলায় মা ছুটতেন মহিলা পরিষদের কাজে। ছুটির দিনগুলোতে সংসারের দায়িত্ব ,বাজার সদাই ,গুরুজনদের ভাল মন্দের খোজ খবর করতেই মা ব্যস্ত থাকত। ছোট বেলায় মাকে আমরা খুব এক্টা কাছে পেতাম না। বাবার উপর খুব অভিমান হতো আর তাই বাবার মত কেউ স্নেহশুলভ আচরণ করলে আমি তাদের খুব ন্যাওটা হয়ে যেতাম। আমার জীবনের যত রকম ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার জন্ম সেখানেই।
ভেবেছিলাম নিজের কথা লিখব। কিন্তু গত কদিন ধরে পুরনো কথা ভেবে ভেবে আমার মনের অবস্থা খুবই নাজুক। লিখবার জন্য যে সাহস দরকার তাও বোধহয় আমার নেই। তাই আপনারা যারা লিখছেন আপনাদের সাধুবাদ জানাই।
এই লেখাটা লিখতে যে সাহসের দরকার হয়েছে তার জন্য অভিবাদন।
পুরো দুনিয়াজুড়েই কত কত যে দ্বৈতাচার চলে, চলছে! আর মেয়েদের জন্য ত দ্বৈতাচার-ই যেন প্রাপ্য আচার।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
নতুন মন্তব্য করুন