সব লাল হো যায়েগা? পর্ব ২...

কৌস্তুভ এর ছবি
লিখেছেন কৌস্তুভ (তারিখ: রবি, ১০/১০/২০১০ - ৫:১৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

পর্ব ১

গত কয়দিনের বহুআলোচিত খবর ছিল চীনা মানবাধিকার আন্দোলনের নেতা লিউ শিওবো’র নোবেলপ্রাপ্তি। ইনি নমিনেশন পাওয়ার পর থেকেই চীন নরওয়েকে চাপ দিয়ে গেছে যাতে তাঁকে নোবেল না দেওয়া হয়, নইলে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিশ্লেষকদের বক্তব্য, এভাবে চীন নিজেই সমস্যা ডেকে এনেছে, কারণ প্রকাশ্যে এ খবর চলে আসার পর তাঁকে নোবেল না দিলে প্রচার হয়ে যেত, নরওয়ে চীনের কাছে নতিস্বীকার করেছে।

চীনের কমিউনিস্ট সরকারের লৌহযবনিকার বিরোধিতা করে তিয়েনয়ামমেন স্কোয়ার (১৯৮৯) এর সময় থেকে এঁর উঠে আসা। প্রফেসর হিসাবে বিদেশে বক্তৃতা-সফর ছেড়ে তিনি ফিরে আসেন দেশের আন্দোলনে যোগ দিতে, এবং ক্রমে মানবাধিকার আন্দোলনের একজন বড় নেতা হয়ে ওঠেন। সাম্প্রতিককালে একটি মানবাধিকার সনদ, চার্টার-০৮, তৈরীতে অংশগ্রহণের জন্য তাঁকে সরকার আবার বন্দী করে। ওই সনদটিতে বর্তমান দমননীতির বিরোধিতা করে আমেরিকা ও ফ্রান্সের সংবিধানের মত উদারপন্থী ব্যবস্থার পরামর্শ ছিল। স্বভাবতই সরকার সেটিকে দেশের ও আইনের বিরোধিতা ইত্যাদি দেখিয়ে তাঁকে ক্রিমিনাল বলে চিহ্নিত করেছে এবং তাদের বক্তব্য যে এই ব্যক্তি জনহিতৈষী নয়, অপরাধী, তাই একে নোবেল দিয়ে কমিটি নিজেকে উপহাসাস্পদ করেছে মাত্র।

অবশ্য এনার নোবেল পাওয়া নিয়েও খুব আশাবাদী হবার কিছু অনেকেই দেখছেন না। আং সান সু কি পেয়েছিলেন ১৯৯১ তে, এখনও বর্মার সামরিক শাসকদের থেকে মুক্তি পেয়েছেন? দলাই লামা পেয়েছিলেন ১৯৮৯ এ, এক আনাও লাভ হয়েছে তাতে তিব্বতের?

বরং চীনের কঠোর মিডিয়া সেন্সরশিপের ফলে তারা অনেকটাই সফল, সাধারণ মানুষকে এইধরণের আন্দোলন সম্পর্কে জানতে না দিতে। অনেক সাধারণ মানুষই লিউকে তাই একজন দেশদ্রোহী হিসাবেই জানে, এবং নোবেল কমিটির উপরেও বিরক্ত

চীনে সেন্সরশিপের ইতিহাস সুবিখ্যাত। গুগলে তিয়েনয়ামমেন স্কোয়ার এবং আরো অনেক শব্দ দিয়ে সার্চ করা যায় না সে দেশ থেকে। এই ঘটনার পরে সাবধানতা হিসেবে সিএনএন, বিবিসি ইত্যাদি বিদেশি সংবাদমাধ্যমকেও ব্যান করা হয়, ইন্টারনেটে এ ধরনের সমস্ত সার্চ বন্ধ করা হয়, ওনার নাম দিয়ে এসএমএস পাঠানো বন্ধ হয়।

(১) –––––––––––––––––––––––––

চীনের কমিউনিস্ট শাসনের সঙ্গে সোভিয়েত রাশিয়ার কমিউনিস্ট জমানার মিলও আছে, আবার তফাতও। দু’জায়গাতেই কমিউনিস্ট পার্টির একচ্ছত্র শাসন থাকলেও, রাশিয়ায় সেটা বস্তুত ছিল একনায়কতন্ত্র – পার্টি সেক্রেটারি স্টালিন যার সর্বময় কর্তা। চীনে কিন্তু একজন নয়, পার্টির পলিটব্যুরোই সিদ্ধান্ত নেয়। এ বিষয়ে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে মিল আছে। পলিটব্যুরোর ‘দূর থেকে সমালোচনা করব, দায় নেব না’ মতবাদ থেকে নেওয়া সিদ্ধান্তেই জ্যোতিবাবু ভারতের প্রথম বাঙালী প্রধানমন্ত্রী হওয়া থেকে বঞ্চিত হয়ে হয়ে ‘ঐতিহাসিক ভুল’ বলে আক্ষেপ করেছিলেন (হলে দেশকে বিলেত বানিয়ে ফেলতেন, হেঁ হেঁ)। কয় বছর অন্তরই নেতা আসেন যান চীনে, পার্টির কর্তৃত্ব থেকে যায়।

আধুনিক বিদেশী প্রযুক্তি গ্রহণেও চীনের কোনো সঙ্কোচ নেই। বরং কিছুদিন পরে বিদেশের যন্ত্রপাতির যোগানদারই তারা হয়ে ওঠে। আর রাশিয়ায় শিল্প ও বিজ্ঞানের কি রকম অযত্ন হয়েছিল স্টালিনের খামখেয়ালিপনায় সে তো জানা’ই। আমাদের লাইনে বার বার ওঠে লিসেঙ্কো’র কথা। কমিউনিস্ট পার্টির আদর্শ ছিল, সবাই সমান, সবাইকেই রাষ্ট্র সমান যত্ন নেবে। জিনে লুকিয়ে জীবের দোষগুণ, যা ঠিক করে দেয় তার বৈশিষ্টাবলী? বুর্জোয়া অপপ্রচার। এই মতবাদ প্রচার করে লিসেঙ্কো স্টালিনের প্রিয়পাত্র হয়ে ওঠেন, এবং জীববিদ্যা ও কৃষি গবেষণার হর্তাকর্তা হয়ে দাঁড়ান। কেবল পরিবেশের রদবদল ঘটিয়েই তিনি অসাধারণ সব ফসল ফলিয়েছেন, দাবী করে তিনি মিডিয়ায় সোভিয়েত কৃষির প্রতীকপুরুষ হিসাবে খ্যাতি পান। যাঁরা জিনভিত্তিক গবেষণা করতে চেয়েছিলেন, বা যাঁরা বলেন লিসেঙ্কোর দাবী তাঁরা রেপ্লিকেট করতে পারেন নি, তাঁদের নানাভাবে অপমানিত এবং অত্যাচারিত করা হয়, সাইবেরিয়ার ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। শুরুর দিকে অনেক উল্লেখযোগ্য উন্নতি হওয়া সত্ত্বেও সোভিয়েত জীববিদ্যা তাই অগ্রগতি পায় নি। এইধরনের কোনো ঝামেলার অবকাশ নেই বলে এই যুগে এগিয়েছিল তাদের গণিত গবেষণা। নাম্বার থিয়োরি, প্রবাবিলিটি ইত্যাদিতে সোভিয়েত অঙ্কবিদদের দান অসামান্য।

অবশ্য বিদেশি প্রযুক্তি নিলেও, বিদেশি রাষ্ট্রব্যবস্থা, যেমন বহুদলীয় গণতন্ত্র, সম্পর্কে চীন বলে আসছে যে ওসব কেবল পশ্চিমেই সম্ভব, এখানে নয়।

মোট কথা, পশ্চিমের জন্য রাশিয়া যতটা রুদ্ধদ্বার ছিল, চীন ততটা নয়। বিদেশে যে পালে পালে ছাত্রছাত্রী পাঠাচ্ছে তারা, সে তো আগের পর্বে দেখেইছি। কেবল তাদের ব্যাপারে নাক না গলালেই হল।

(৩) –––––––––––––––––––––––––

 

২০০৮ সালে, আমেরিকায় অর্থনৈতিক সঙ্কটের সময়ে একটা খবর বাজারে খুব সাড়া জাগায়। রাশিয়ান গবেষক পানারিন সেই ১৯৯৮য়ে দাবি করেছিলেন আমেরিকা ভেঙে পড়তে চলেছে; সেই খবর নতুন করে আবার প্রচারিত হয়ে এই গোলমালের সময়ে প্রচুর বিজ্ঞাপিত হয়। ইউরোপ, কানাডা, চীন, মেক্সিকো, রাশিয়া আর জাপান নাকি বাঁটোয়ারা করে নিতে চলেছে সে দেশ। যদিও তাঁর দাবি ছিল, ২০১০-এর মাঝামাঝি এটা হবে, সেই সময় পেরিয়ে এসেছে, আর তেমন কোনো সম্ভাবনাও এই মুহূর্তে দেখা যাচ্ছে না, বরং আমেরিকা সামলে ওঠারই লক্ষণ দেখাচ্ছে। যা হোক, তিনি তাঁর ভবিষ্যতবাণীর সপক্ষে যুক্তি দেখাতে শুনিয়েছিলেন, যে তিনি যেমন আর্থসামাজিক ডেটা ঘেঁটেছেন, তেমনই সেই ১৯৭৬য়ে ফরাসী ডেমোগ্রাফি গবেষক তদ যখন বলেছিলেন, সোভিয়েত রাশিয়া ভাঙতে চলেছে (শিশুমৃত্যুর হার ইত্যাদি ফ্যাক্টর ধরে), তখনও সবাই অবিশ্বাসই করেছিলেন। (সেই তদও বলছেন, সোভিয়েত রাশিয়ার হঠাৎ পতনে আমেরিকা যে ফাঁকা মাঠে গোল দেবার সুযোগ পেয়ে গেছিল, তার দিন ফুরিয়ে এসেছে।)

আমেরিকা ভাঙুক না ভাঙ্গুক, কমিউনিস্ট সোভিয়েত রাশিয়া তো শক্তি হারিয়ে ভেঙে টুকরো হয়েছে। আর তারা যেমন তাদের পশ্চিমবাগে শাসনাধীন পূর্ব ইউরোপের উপজাতিগুলিকে অবজ্ঞা বা অত্যাচার করত, একই জিনিস কি চীন তাদের পশ্চিম দিকেও করে আসছে না? তাহলে কি এমন হতে পারে, সোভিয়েতের মত কমিউনিস্ট চীনেরও একদিন পতন ঘটবে এবং তারাও টুকরো হয়ে যাবে?

চীনের এই পরিস্থিতি নিয়ে আলাপ করার একটা সুযোগ হয়েছিল ফ্রাঙ্কফুর্ট থেকে প্লেনে বস্টন আসার সময়। আমার সহযাত্রী ছিলেন আন্তর্জাতিক সম্পর্কের গবেষক বলদাস ঘোষাল। ওনাকে এই প্রশ্নটাই করেছিলাম।

উনি বললেন, নাঃ বাছা, সে সম্ভাবনা নেই এখনই। ওনার বক্তব্য, চীনের গঠনতন্ত্র অনেক বেশি মজবুত। পার্টির প্রতিনিধিরা এক-দুজনের ইচ্ছামত নির্বাচিত হয় না, বিধি মেনেই হয়। তাই উঁচু লেভেলে যথেষ্ট করাপশন থাকলেও, নিচু লেভেলে, মফঃস্বল বা গ্রামের দিকে শক্ত হাতে সেসব দমন করা হয়। পঞ্চায়েত নেতা দুর্নীতি করে ধরা পড়লে তাদের মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত হয়। আবার এই স্তরের নেতাদের বক্তব্যও যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে শোনা হয় পার্টির উঁচু স্তরে, গ্রামীণ নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে। তাই গ্রামের মানুষজন ততটা অখুশী নয়। করাপশনের ব্যাপারে নাকি চীন অনেকটা আমেরিকার মত, দুর্নীতিটা বড় বড় লোকেদের বড় বড় ব্যাপার, আমাদের মত রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি না।

(৪) –––––––––––––––––––––––––

পর্ব ১-এ মূলত আলোচনা ছিল বিদেশি শিক্ষাক্ষেত্রে চীনা আধিপত্য নিয়ে। সেখান থেকে এই পর্বে চীন সরকারের আলোচনায় চলে এলাম কেন? কারণ বলেছিলাম, যে এই অবস্থার পেছনে কতটা তাদের দেশের সমাজের প্রভাব আর কতটা তাদের সরকারের, সেটা নিয়ে পরের পর্বগুলিতে কথা আসবে। আবার সমাজ এবং সরকারের পলিসি অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। যেমন জনবিস্ফোরণ কমাবার জন্য তাদের এক সন্তান নীতি। এটা সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে গভীর প্রভাব ফেলেছে। যেমন তাদের গড় বয়স বৃদ্ধি। কারণ প্রতি দুজন প্রৌঢ়ের জন্য এখন এক জন যুবক/যুবতী মাত্র। এবং আধুনিক চীনেও ছেলেমেয়েরা বাবা-মার থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। কিন্তু পশ্চিমা সমাজের মত সব বৃদ্ধ-বৃদ্ধাকে স্বাস্থ্যপরিষেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। সব মিলিয়ে চীনের প্রৌঢ়দের মধ্যে আত্মহত্যার হারও চিন্তাজনক ভাবে বাড়ছে

এবং এই হার বেশি মহিলাদের মধ্যে। নারী/পুরুষ অনুপাতও হ্রাস পাচ্ছে – ১০:১৩ হয়ে দাঁড়াচ্ছে কোথাও কোথাও – আমাদের দেশের মত চীনেও পুরুষ সন্তানই পছন্দ করা হয়, এবং এক সন্তান নীতির ফলে তাই গর্ভপাতও চলছে, ভ্রুণ মেয়ে হিসাবে নির্ণয় হলে।

এই নীতি ধনী-গরিবের বিভাজনটাও আরেকবার স্পষ্ট করে তুলেছে। মধ্যবিত্ত যারা সরকারি চাকরি করেন, তারা একাধিক সন্তান আনলে বরখাস্ত হবেন। গরীবরা সরকারী সাহায্য হারাবেন। আর যাঁরা সরকারের উপর কোনোভাবে নির্ভরশীল নন, তাদের দিতে হবে শুধু ফাইন। তাই বড়লোকদের বংশবৃদ্ধিতে কোনো বাধা বস্তুত নেই।

একমাত্র সন্তান হবার ফলে যা হয়েছে, মধ্যবয়সী বাপ-মার এখন মনোভাব, এই একমাত্র সন্তানই আমাদের জীবনপ্রদীপ, এর মঙ্গলের জন্যই আমাদের বাকি জীবনটা নিবেদিত করে দেওয়া প্রয়োজন। নইলে এই প্রচণ্ড প্রতিযোগিতাময় আধুনিক সমাজে এ বাঁচবেই বা কি করে? আদরে বাঁদর করার ব্যাপারটাও তাই প্রবলভাবে আসছে। এ নিয়ে কিছু চমৎকার কার্টুন পেলাম এখানে:


চীনা খোকাখুকুদের এখন ডাকা হয় ‘লবাবজাদা’ বলে, তারা এত অত্যাধিক প্যাম্পারড বলে। এইটা খাবার নিয়ে হ্যাথা করার উপর। তাসনীম ভাইয়ের ‘মামুর ব্যাটা’ মনে পড়ে যায়...

যেমন, আমাদের ডর্মে একটি চৈনিক বালিকা ছিল, বয়সে যত না ছোট, হাবভাবে আদুরে খুকি। বড়লোক পরিবারের মেয়ে, কুটোটি নাড়াতে হয় নি, তাই কুঁড়ের জাহাজ, নিজে কখনও রান্নাবান্নার ধার দিয়েও যেত না। বালিকার নাম ছিল হুই-ওয়েই তথা বারবারা। জানেন নিশ্চয়ই, পরে পশ্চিমে গিয়ে যাতে সুবিধা হয় তাই ওদের রীতি হল খোকাখুকু ইস্কুলে ভর্তির সময়েই তাদের একটা বিলিতি নামও দিয়ে রাখা হয়, যেটা সরকারি ভাবে কাগজপত্রেও উঠে যায়। আমাদের রবীন্দ্রনাথদের এ সুযোগ কবে হবে?

(৫) –––––––––––––––––––––––––

যাহোক, বালিকার গল্পে আসি। আগে একটু চাম নিয়ে নিই। ডর্মে আমার রান্নার বিশেষ খ্যাতি ছিল, অল্প মশলা দিয়ে রান্না করলেও এক্সোটিক ইন্ডিয়ান স্পাইসের চিত্তচুলবুলকারী গন্ধে বেশ কিছুক্ষণ রান্নাঘর-করিডর-কমনরুম আমোদিত হয়ে থাকত। একদিন ফোড়ন দিয়ে মুগডাল করার পর নখের মত সরু সরু বেগুনি ভাজছি বেসনে চুবিয়ে, ফাঁকে ফাঁকে থাকতে না পেরে একআধটা চাকুমচুকুম মেরে দিচ্ছি। খুকুমণি এসে আমাকে এই জটিল পন্থায় লিপ্ত দেখেই নারীসুলভ কৌতুহলী হয়ে উঠল, অ্যাই, এটা কি খাও? তখনও বুদ্ধিটা পাইনি, যে বলি, ‘বালিকা, তোমায় চুমু’ খাই, তাই পদ্ধতিটাই বুঝিয়ে বললাম। সে বলল, অ্যাঃ, এগপ্ল্যান্ট আবার খেতে ভাল হয় নাকি? তখন আর বলি কি, বলতেই হল, বিশ্বাস না হয় খেয়ে দেখ। বেটি যে এত সেয়ানা তখন বুঝি নাই, একটা খেল, প্রভূত প্রশংসা করল, আর একটা খাই? বলে আরেকটা খেল, অভূতপূর্ব প্রশংসা করল, আরো খেল, আমার বেগুনির স্তূপ ভূতপূর্ব হয়ে গেল। অভিভূত হয়ে বুঝলাম, কেন চীনারাই দুনিয়া দখল করছে। আবার বেগুন কাটার উদ্যোগ নিতে লাগলাম।

তখন বালিকা ফ্রিজ থেকে নিজের খাদ্য বের করল। জিনিসটা আম্রিকাবাসীরা জানেন – একটা গোল থালার মধ্যে একটা সসের বাটি বসানো, চারদিকে গোল করে সেদ্ধ চিংড়ি বসা, ডুবিয়ে খাও। সে বলল, আহা, তোমার সব খাবার মেরে দিলাম, তুমি আমার থেকে একটু ভাগ নিতে পারো, তবে আমার এই খাবার, তোমার কি আর মুখে রুচবে? বললাম, হ, খাড়াও, ব্যবস্থা করে নিলেই রুচবে। একটা চিংড়ি তুলে ঘ্যাঁচ করে বেসনে ডুবিয়ে কড়ায় ছেড়ে দিলাম। সে হাউমাউ করে উঠল, গেল গেল আমার চিংড়ির জাত গেল বলে। পাত্তা না দিয়ে জিনিসটাকে তুলে, না, তাকে দিই নি, নিজেই খেলাম, নুনটুন ঠিক আছে কি না দেখতে হবে তো। দ্বিতীয়টা ভেজে তাকে দিলাম, নাও এবার সস দিয়া খাও। আবার হাউমাউ করে উঠল, আইলা, আমার চিংড়ির তো জাতই পালটে গেছে, আরো ভাজো, বলে। ফ্লোরের আরও খানকতক চিনাকে ডেকে আনল এই বস্তুর আবিষ্কার জানাতে। সবার জন্য ভেজে ভেজে হেদিয়ে গেলুম। শেষে যখন নিজের ডালভাত নিয়ে বসতে পেলুম, জুড়িয়ে বরফ হয়ে গিয়েছে (এইখানেই ভারতীয়দের চীনারা মেরে বেরিয়ে যায়, সলিডারিটি’র ক্ষেত্রে – বালিকার জায়গায় আমরা থাকলে কারুরে না ডেকে নিজেরাই মেরে দিতেম না? সাধে কি আর সব চিনাদের একসাথে জটলা করে কিচিরমিচির করতে দেখা যায়।)

ফ্লোরে হং নাম্নী এক চীনা মহিলা ছিলেন, এক (৩-৪ বছরের) মেয়ের মা, চীনের ইউনিতে প্রফেসর, ভিজিট-কাম-রিসার্চের জন্য এসেছেন। তিনি আবার ‘সবই ব্যাদে আছে’ টাইপ, নতুন কিছু দেখলেও ‘এ সব আমাদের দেশেও আছে’ বলে তুশ্চু করে দেন। তাঁর প্রচুর গল্প আছে, বলতে গেলে দিন পেরিয়ে যাবে। তা তিনি খেয়ে বালিকাকে বকা দিলেন, এই তুচ্ছ জিনিস নিয়ে হইচই করার জন্য, ভাজা চিংড়ি তো চিনে রেস্তোরাঁতে কতই হয় (খোলসটা যে ওদের মত ময়দা আর কর্নফ্লাওয়ার না, বেসন, অনেক আলাদা স্বাদ আর টেক্সচার, সেটা তিনি ধরতে পারেন নাই)। আর আমাকে উৎসাহ দিলেন, হ্যাঁ, চিনে পুরুষেরা যারা একদম রান্না করতে পারে না তারা ভাজা চিংড়ি করতে গেলে এরকমই করবে, আমার দুঃখিত হবার কিছু নাই, উন্নতি করার চেষ্টায় থাকি যেন। ‘দূরে গিয়া মরেন’ মনে মনে বলে চলে এলাম।

নাঃ, এই পর্বে মালমশলা কম আর গল্পই বেশি হয়ে গেল। পরের পর্বগুলোয় পুষিয়ে দেব আশা করি... নাকি বালিকার গল্পই লোকে শুনতে চান? চোখ টিপি


মন্তব্য

স্পর্শ এর ছবি

রাখেন আপনার নোবেল প্রাইজ! তারপর বালিকার কী হলো?


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

কৌস্তুভ এর ছবি

বালিকার কী হবে? কী হতে পারে? কী হওয়া উচিত?

পড়ার জন্য আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

হিমু এর ছবি

মচমচে।

রাষ্ট্র হিসেবে চীন, আর জাতি হিসেবে চীনারা যেটা করছে, একটা ইভোলিউশনারিলি স্টেবল স্ট্র্যাটেজি [ইএসএস] থেকে আরেকটা ইএসএসে মুভ করছে। তাদের বটম আপ আর টপ ডাউন, দুটো ব্যবস্থার গোড়াই খুব মজবুত করে বাঁধা বলে এটা সম্ভব হচ্ছে। স্টিফেন জে গুল্ডের পাংচুয়েটেড ইকুইলিব্রিয়ামের মতো দেখুন, চীন নির্দিষ্ট বিরতি দিয়ে আস্তে আস্তে বিশ্বের দরিদ্রতম দেশগুলোর একটি থেকে পরাশক্তিতে রূপান্তরিত হয়েছে। একটা গোটা জাতি যদি একটা অর্গানিজমের মতো বুদ্ধিমান আচরণ করতে পারে, সে তো এগোবেই [বিপরীত উদাহরণ আছে, পাকিস্তান]।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভেঙে গেলে যে বাজে ব্যাপারটা হবে, তা হচ্ছে, রিপাবলিকানবহুল একটা রাষ্ট্র থাকবে, যাদের চেক দেয়ার জন্যে কোনো উদারপন্থী লোক থাকবে না। এদের হাতেও কিন্তু নিউক্লিয়ার বোমা থাকবে, সৈন্য থাকবে, অস্ত্র থাকবে।

নির্লজ্জ হতে পারলে উন্নতি অবশ্যম্ভাবী। দুই হাজার তিনে আমি একবার স্বল্প সময়ের জন্যে জার্মানি এসেছিলাম। নিধি সচদেভ নামে এক পাঞ্জাবি দিল্লিওয়ালি আমার প্রতিবেশিনী ছিলো এক মাসের জন্যে। এই একমাস নিধি কোনো বাজার করেনি, ফ্লোরে এর ওর ঘাড়ে চড়ে একেকদিন একেকবেলা খেতো। এ নিয়ে তার কোনো লজ্জা বা দ্বিধা চোখে পড়েনি কখনো। হাতখরচের টাকা সে প্রায় পুরোটাই বাঁচিয়ে শপিং করেছে।



বুকে BOOK রেখে বন্ধু চলো আজ যাবো বরাহশিকারে মোরা ধার ধার ধার দিও বল্লমে ♪♫

কৌস্তুভ এর ছবি

বিস্তারিত মন্তব্যের জন্য প্রভূত আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

হুঁ হুঁ, আমার নির্মিত বেগুনির মতই মচমচে... চোখ টিপি

চীন সম্বন্ধে যা বলেছেন তার অধিকাংশের সঙ্গেই একমত, তবে যেগুলিকে ইকুইলিব্রিয়াম-এর অবস্থা বলছেন সেগুলিতেও কি ক্রমশ পরিবর্তন হয়েই চলে নি? গ্র্যাজুয়ালিটি-টা অবশ্য সত্যিই, এক একটা বড় নীতি পরিবর্তনই এক একটা বড় ধাপ।

যুক্তরাষ্ট্র ভাঙলে কি ভাবে ভাঙবে, তার উপরেই নির্ভর করছে রিপাবলিকানরা কতটা এই বিষয়ক পরিকাঠামো পাবে। তবে কোন পার্টি তার থেকেও বড় বিষয় হল গোঁড়া'রা কতটা ক্ষমতা পাচ্ছে, সেটা রিপাবলিকান ডেমোক্র্যাট যে কেউ হতে পারে। দল বদলের খেলা তো ওখানেও চলে।

উন্নতির লক্ষ্যে দিল্লীআগত পাঞ্জাবী (শিখ নয়)-দের গড়ে প্রবল প্রতিযোগী মনোভাব, তদ্‌জাত স্বার্থপরতা ও রুথলেস ভাব, এবং পরিশীলিত সংস্কৃতির প্রতি অবহেলা নিয়ে অনেকেই বলেছেন, আলিসাহেবের দিল্লী সংক্রান্ত প্রবন্ধেও সে কথা আছে। তারা একই অভ্যাস বিদেশে গিয়েও দেখাবে, এ আর নতুন কথা কি।
ভারতীয় ছাত্ররা অবশ্য সবাই অল্পবিস্তর পয়সা বাঁচানোর ফন্দিফিকির করে থাকে, যেটা মাঝে মাঝেই নির্লজ্জ এমন কি বেআইনি পর্যায়েও চলে যায়। এ নিয়ে একটু বিস্তারিত লেখার ইচ্ছা আছে।

অদ্রোহ এর ছবি

বেশ খাটাখাটনি গেছে মনে হচ্ছে কৌস্তুভদা।চীনাম্যানদের এক পরিবার এক সন্তানের নীতি সম্পর্কে শুনেছিলাম, সেটার ব্যাত্যয় ঘটলে আক্কেল সেলামির ব্যাপারটাও জানলাম, কিন্তু ওই শিশুটিকে কী ভয়াবহ একাকীত্বের মাঝে দিন কাটাতে হবে সেটাও ভাবনার বিষয় বৈকি।

নোবেল পুরস্কার নিয়ে গিয়াঞ্জামের তো আর অন্ত নাই, এবারও এরকম কিছু হবে তাতে আর অবাক হওয়ার আছেটা কী?

তবে আমেরিকার বিভক্তিকরণ নীতিটা পড়ে বেশ কিছু ইন্টারেস্টিং ব্যাপার মাথাচাড়া দিয়ে উঠল।দেখি ,পুরোটা জেনে পরে কথা হবে খন।

ধুর, হুদাই এত বড় কমেন্ট করলাম। তারপর, বালিকার খবরাখবর কী? দেঁতো হাসি

--------------------------------------------

আজি দুঃখের রাতে, সুখের স্রোতে ভাসাও তরণী
তোমার অভয় বাজে হৃদয় মাঝে হৃদয় হরণী।

--------------------------------------------
যদ্যপি আমার গুরু শুঁড়ি-বাড়ি যায়
তথাপি আমার গুরু নিত্যানন্দ রায়।

কৌস্তুভ এর ছবি

খাটাখাটনি বলে খাটাখাটনি? ব্রাহ্মণসন্তান বিদেশে এসে কোনোরকমে স্বপাক হবিষ্য করে চালিয়ে নিচ্ছিলাম, এদের দায়ে একেবারে রসুয়ে বামুন হয়ে যেতে হল!

দেখেন পড়ে। ডেমোগ্রাফি স্ট্যাটিস্টিক্সেরই একটা শাখা, তাই ওসব ব্যবহার করে কিভাবে তদ সোভিয়েত রাশিয়ার বিভাজন পূর্বাভাস করেছিলেন, এটা জানার কৌতুহল হচ্ছে। তবে ওনার বইটা ইন্টারনেটে নাই। লাইব্রেরিতে চেষ্টা করতে হবে।

বালিকার খবর আর কি। সে করছিল স্ট্যাটিস্টিক্সে মাস্টার্স, যদিও শেষ বছরটা মূলত পোকার নিয়েই কাটাত, পোকার থেকে উপার্জনই তখন তার প্ল্যান ছিল।
যদিও স্ট্যাট থেকে এখন বায়োস্ট্যাটে চলে গেছি, মূল বিষয়টার প্রতি আগ্রহ থেকেই গেছে। আর আমাদের ফ্লোরে স্ট্যাটের অনেক লোকজন ছিল; একবার এমন একজনের সঙ্গে দারুণ ইন্টারেস্টিং একটা অঙ্ক নিয়ে কথা বলতে বলতে কোয়ালিফায়ার পরীক্ষার মিটিংয়ের কথাই ভুলে গেছিলাম। ঐ বালিকা ও তার বান্ধবীরাও এটার সুযোগ নিত, কঠিন অঙ্ক থাকলেই আমাকে দিয়ে যেত। তা পাশটাশ করে শেষমেষ এখন সে নিউইয়র্কে চাকরি করছে। হল?
এর আরো খুচখাচ দুএকটা গল্প আছে, খেয়াল থাকলে বলব'খুনি।

শাহেনশাহ সিমন এর ছবি

আপনে তো পুরাই 'উপকারী' জিনিস চোখ টিপি
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

কৌস্তুভ এর ছবি

হ। এবার এই উপকারী জিনিসের প্রতি একটু পরোপকারী হয়ে কিছু প্রত্যুপকারী বালিকার চেষ্টা দেখেন তো... হাসি

সুমন চৌধুরী এর ছবি

হায় চীন, সুনালি ডানার চীন ...



অজ্ঞাতবাস

কৌস্তুভ এর ছবি

সুনালি বলে একটা শ্রীলঙ্কান মেয়ে ছিল, যে ক্লাস পড়াতাম তাতে... ভাল মেয়ে, মন দিয়ে পড়াশোনা করত...

তাসনীম এর ছবি

দারুণ লাগলো...


চীনা খোকাখুকুদের এখন ডাকা হয় ‘লবাবজাদা’ বলে, তারা এত অত্যাধিক প্যাম্পারড বলে। এইটা খাবার নিয়ে হ্যাথা করার উপর। তাসনীম ভাইয়ের ‘মামুর ব্যাটা’ মনে পড়ে যায়...

সময় এসেছে শিশুপালন চৈনিক ভাষায় অনুবাদ করে পলিটব্যুরো বরাবর পাঠানো।

সে বলল, অ্যাঃ, এগপ্ল্যান্ট আবার খেতে ভাল হয় নাকি? তখন আর বলি কি, বলতেই হল, বিশ্বাস না হয় খেয়ে দেখ। বেটি যে এত সেয়ানা তখন বুঝি নাই, একটা খেল, প্রভূত প্রশংসা করল, আর একটা খাই? বলে আরেকটা খেল, অভূতপূর্ব প্রশংসা করল, আরো খেল, আমার বেগুনির স্তূপ ভূতপূর্ব হয়ে গেল।

খাদ্য-খাদক সম্পর্কটা চালু রাখলে হিমুর ওই ডিশটাও বরাতে জুটবে মনে হয় চোখ টিপি দোয়া রইল।

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

কৌস্তুভ এর ছবি

গুরুজনের দোয়া মাথা পেতে নিলাম।

সে আর হবে না, ওই উপরে বললাম না, বালিকা পাশটাশ করে নিউইয়র্ক চলে গেছে।

এদিক-ওদিক থেকে মাঝেসাঝে যে কিছু আভাস আসে না তা নয়। বালিকাও একবার দূতীগিরির চেষ্টা করেছিল। কিন্তু পাত্তা দিই না।

সুজন চৌধুরী এর ছবি

ভালো লাগলো পড়ে,
সবচেয়ে ভালো লাগলো " আদরে বাঁদর" টা।


লাল গানে নীল সুর, হাসি হাসি গন্ধ

কৌস্তুভ এর ছবি

ধন্যবাদ সুজনদা।

বাঙলায় বড়লোকের ব্যাটারাও কম আদরে বাঁদর হচ্ছে না। বাইক ফটফটিয়ে আকামকুকাম করার ঘটনা তো কাগজে কতই বেরচ্ছে।

শাহেনশাহ সিমন এর ছবি

কার্টুনটা ভাল্লাগলো। 'আমার দেশে তো এমন কত্তো আছে' টাইপের পাব্লিকগুলারে দেখলেই ...
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

কৌস্তুভ এর ছবি

ধন্যবাদ।
দেখলেই কি? বেগুনির মত পটাশ করে তপ্ত কটাহে ছেড়ে দিতে ইচ্ছা করে?

রানা মেহের এর ছবি

খুব মজা পেয়েছি আপনার লেখায়।
তবে একটা ব্যাপার। চীনাদের ইউনিটি সত্যি দেখার মতো।
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

কৌস্তুভ এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ রানা মেহের (এবারে নাম ভুল করিনি আশা করি) হাসি

হ্যাঁ... এর কারণ কি বলে আপনার মনে হয়?

মানিক চন্দ্র দাস এর ছবি

দাদা, রান্না কি এখনো চলছে নাকি? চাইনিজ বালিকারে চাইনিজ বানায়া খায়া ফালান। কি আছে দুনিয়ায়!!! লেখাটা ভালো লাগছে দাদা। মজারু।

কৌস্তুভ এর ছবি

ধন্যবাদ মানিক ভাই। রান্না এখনও চলছে বটেই, তবে এখন নিজেদের অ্যাপার্টমেন্টে আছি, চৈনিক বালিকারা সাথে নাই কেউ। হাসি

"চাইনিজ বালিকারে চাইনিজ বানায়া খায়া ফালান।" - এইটা খুব সিরিকাস কমেন্ট, এসবের উত্তরে নিয়ে কিছু কমু না।

অতিথি লেখক এর ছবি

আমার চীনা অফিস-মেটের সাথে প্রায়ই কথা হয় ওদের দেশ নিয়ে। ওর কথা থেকে মনে হল চীনা জনগণের সাথে সরকারের তেমন যোগ নেই, অর্থাৎ পার্টি সরকার চলে নিজের মত করে, জনগণের তেমন কিছু বলার নেই। তার কথায় হান জনগোষ্ঠী শান্তি পরায়ণ, তিব্বত বা মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলে সরকারের আগ্রাসন নিয়েও ওদের তেমন ধারণা নেই। আর একটা জিনিস এমনকি চীনা আমজনতা ও জানে, সরকারী চাকুরী পেতে গেলে পার্টি করাটা অত্যাবশ্যক।

আপনার রান্নার প্রতিভা ঠিক কাজে লাগছে জেনে ঈর্ষান্বিত। এই জন্যই বলি, আমি রান্না-বান্নায় তেমন উৎসাহ পাইনা কেন খাইছে

সজল

কৌস্তুভ এর ছবি

এ কথা সত্যি। মিডিয়ার উপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ খুবই কড়া, দেশের কোথাও অবাঞ্ছিত কিছু ঘটলে, কোনো 'ডিসিডেন্ট' মতবাদ উঠলে, সেটা পাবলিককে জানতে দেওয়া হয় না, পাছে তারাও সহমত হয়। এ কাজটা যে তাদের সরকার বেশ দক্ষ ভাবেই করেছে, সেটাই আমিও বলার চেষ্টা করেছি।

মোটামুটি খেয়েপরে থাকতে পারলে প্রাচ্যের মানুষেরা এমনিতে বেশি কিছু চায় না, যদি না পাশ্চাত্যের গ্ল্যামারে তাদের মন ভরিয়ে দেওয়া হয়। যেমনটা হয়েছে জাপানে, তারাও আমেরিকার জীবনযাত্রার অনুকরণ করতে চায়। আবার সেটা মোটামুটি মিলে গেলে তাতেই তারা খুশি, তার থেকে বেশি উচ্চাকাঙ্খা তাদেরও নেই। এটা নিয়ে পর্ব ১য়ে কথা উঠেছিল, দেখতে পারেন - http://www.sachalayatan.com/kaustubh/34699#comment-357043

চীনে তো জনগণকে কোনো অপশন দেওয়ার প্রশ্ন নেই। এই সমাজে থাকতে গেলে তোমাকে এই সরকারের অধীনেই থাকতে হবে, তার (পার্টির) মতবাদই মানতে হবে। বিকল্প অ্যালাউড নয়। বুশ সরকারের স্লোগান মনে পড়ে যায়।

ঘোড়ার মুখের খবর শোনানোর জন্য ধন্যবাদ।

অতিথি লেখক এর ছবি

রাশিয়া্য ছিল একটি একনায়কতান্ত্রিক ব্যবস্থা। খেয়াল করে দেখবেন টাইরানি কিন্তু কখনোই স্থায়িত্ব পায়নাই। কারণ সিস্টেমটা ইলাস্টিক না। কিন্তু আমেরিকার ক্ষেত্রে তা হবে কি? পানারিনের গবেষণার পুরাটা পাই নাই। সে বিভিন্ন ভ্যারিয়েন্ট নিলেও কিভাবে সে যোগসূত্র স্থাপন করেছে আর আরো কিছু ভ্যারিয়েন্ট বাদ পড়ে গেল কিনা বা অগুলার সাথে কোনো সম্পর্ক আছে কিনা বলা যাচ্ছে না। সবচেয়ে বড় কথা আমেরিকা সিস্টেম অনেক ইলাস্টিক যা সহজে পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নিতে পারবে। এখানেই চীন দুর্বল জায়গায়। সেখানে একটি সাংঠনিক একনায়কতন্ত্র বিদ্যামান এবং অধিকাংশ মানুষের কাছে মিডিয়া এখনো সেন্সরড। এখন মানুষকে এই যুগে বেশিদিন এভাবে তথ্যবন্ধি করে রাখা যাবেনা। তখন কি হবে? লক্ষণীয় যে তাদের পলিটব্যুরো ইদানিং কিছুটা ইলাস্টিটি দেখাচ্ছে। এমনটা হতে পারে, ভবিষ্যতে হয়তবা এই পলিটব্যুরোর হাত ধরেই চীনে গণতন্ত্র আসবে। তবে এটা একটা সম্ভাবনা মাত্র।

এবারে মুল টপিকে আসি, চীনা বালিকারা কিন্তু মন্দ না। দেঁতো হাসি বাকি খাওয়ার গল্প কখন বলবেন?

অনন্ত

কৌস্তুভ এর ছবি

লেখার মূল টপিকটা চীনা বালিকাই ঠাওরাইলেন? হায়, আমার লেখা কি এতই লুললিপ্ত?

বাকি খাওয়া আর কী? ধার-বাকিতে আমি নেইকো। আপনার অভিসন্ধি সন্দেহজনক মনে লয়... চোখ টিপি

পানারিনের গবেষণা যতটা পেয়েছেন, লিঙ্ক দিতে পারবেন? আমি তদের গবেষণা খুঁজছিলাম, সুবিধা করতে পারি নি।

রাশিয়া কিন্তু কাগজে-কলমে একনায়কতন্ত্র ছিল না। ওদেরও পার্টি ছিল, গঠনতন্ত্র ছিল। একনায়কটা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন স্টালিন। চীনের ক্ষেত্রে তেমন একজন মানুষ কেউ নেই। পলিটব্যুরোকে একনায়ক বলা যেতে পারে হয়ত।
আলোচনার জন্য ধন্যবাদ।

কামরুল হাসান রাঙা [অতিথি] এর ছবি

বালিকারা এমনই হয়।

পরবর্তী লেখার অপেক্ষায়.........

কৌস্তুভ এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- ভাই।

বাউলিয়ানা এর ছবি

সিরিজ দারুন চলিতেছে... কাঠিন্যের মাত্রা আর না বাড়লেই হয় খাইছে

খাবারদাবারের ব্যাপারে চীনাদের কাহিনি কিছুই বুঝলামনা। এরা বলে সবসময় পুষ্টিকর, সুষম, ভিটামিনযুক্ত ইত্যাদি খাবার খায় অথচ সবগুলানের চোখে চশমা। একটায়তো আমারে কয় চশমা ছাড়া চোখ তো চোখ কানেও বলে শোনেনা...আজী্ব!

কৌস্তুভ এর ছবি

:খাইছে

কেন, আপনি কি এই জনমতে বিশ্বাস করেন না, যে চশমা পড়লে বালিকাদের আরো দুষ্টুমিষ্টি লাগে?
আপনি যে চীনাদের দেখছেন তারা তো সবাই খুব পড়ুয়া, কত নৈশদীপের তৈলদাহ করে ইউনিতে এসেছে। তাই তাদের চোখে চশমা আরকি।

নাম সৌরভ এর ছবি

বিলেতে বেসন পাওয়া যায়,অদ্ভুত তো !চোখ টিপি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।