বৃষ্টিভেজা গদ্যকলাপ ৩ : কদমতলার মৌতাত

মুজিব মেহদী এর ছবি
লিখেছেন মুজিব মেহদী (তারিখ: শনি, ৩১/০৫/২০০৮ - ১:২৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

যাত্রামুখে দেখি চোখবড়ো করা কালোমেঘ গায়ে লালাভা মেখে ওঁত পেতে আছে, শিলাপাতের সম্ভাবনা নিয়ে। 'আকাশের শিলাস্তূপ থেকে তিনি বর্ষণ করেন শিলা, আর এ দিয়ে তিনি যাকে ইচ্ছা আঘাত করেন।' শঙ্কা জাগে মনে, আমার খেতের গর্ভিণী ধানের ছড়া, আমার গাছের আমের যত বোল, আমার খড়ের প্রিয় চালাঘর, এ যাত্রা সর্বনাশের সামনে দাঁড়িয়ে গেল তাহলে! হঠাৎ এ-ও মনে হয়ে যায় যে, '...আর যাকে ইচ্ছা তার উপর থেকে এ অন্যদিকে ফিরিয়ে দেন'। সহসাই এরকম বিশ্বাস জেগে ওঠে মনে যে, আমার ওপর থেকে তা ফিরে যাবে অন্যদিকে, হ্যাঁ যাবেই ফিরে ইচ্ছাশক্তির বলে। এ বিশ্বাস আমাকে দেন ভারতবর্ষীয় কৃষি ও আবহাওয়াবিদ খনা, তাঁর 'ধলা মেঘে গলা পানি/ কালা মেঘে ছাগল দৌড়ানি' আর্যাযোগে। ঝরঝরে লাগতে থাকে নিজেকে। মেঘের দিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি এবং কনিষ্ঠাঙ্গুলি দু'টোই একযোগে তুলে ধরি। বলি যে, দু'টোর যেকোনোটা খুশি ঢুকিয়ে বসে থাক, শান্তি পাবে। বেচারা মেঘের লালচোখ মুহূর্তে নত হয়ে যায়। ব্রেভো। গর্বে আবারো সাঁইজির চরণ জাগে পোড়া মুখে। কেন যে জাগে! 'মানুষে মানুষের বিহার/ মানুষ হলে সিদ্ধ হয় তার/ সে কি বেড়ায় দেশ-দেশান্তর/ যেজন পিড়েয় পেরুর খবর পায় ?' বারকয় চরণটি ভাঁজতে ভাঁজতেই আমার বোরাক এসে পৌঁছায় কদমতলে। এ কদম সেদিন যে সে কদম ছিল না। নিচে তার ছিল যথেচ্ছ প্রশ্রয়, কামনার ইঙ্গিত।

ছাগল দৌড়ানি বৃষ্টির ঝটকা ঝরঝর কদমপাতা চুঁইয়ে নিচ পর্যন্ত আসতে পারে না, বরং কদমফুল বরাবর পতিত যে ফোঁটাগুলো, তারা ওই নির্গন্ধ ফুল থেকেই এক ধরনের মৌতাত ঝেটিয়ে বাইরে বের করে দিতে থাকে। এই আচানক মৌতাতে আমাদের জটলার ত্রিভুজঘরানা দীর্ঘ দীর্ঘ দীর্ঘ হতে থাকে। ক্লান্ত বিকেল সন্ধ্যার দরজায় এসে কড়া নাড়ছিল যখন, তখন কদমগাছের শাখাপ্রশাখা ছাড়িয়ে পুব আকাশে চোখ পড়তেই দেখা গেল বিজলীর প্রাচীন সুমেরীয় দেবী জারপেনিভকে তাঁর করিৎকর্মা স্বামীকে নিয়ে যুদ্ধে চলেছেন বায়ুরথে চড়ে, দু'হাতে তাঁর দু'গুচ্ছ বজ্রবাণ। ভয়ে আমরা গাছতলা ছেড়ে আলিশান এক বিজলীদণ্ডের আশ্রয়ে আসি বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিনকে মনে রেখে। খোদার ওপরে খোদকারী মানুষ হামেশাই করে দেখি, কিন্তু ভরসা পায় না বলে বিজ্ঞানীর ওপরে একদম নয়। তাই আমরা বাজাই না গির্জার ঘণ্টা কিংবা দেই না সুরেলা আজান, বরং একটা রঙধনু দেখবার ইচ্ছায় কুত্তাবিলাই ঝরঝরানির মধ্যেও উত্তরচোখে আঁড় হয়ে থাকি। জানি যে পতন রহিত হলে এহেন ধারাজলের, ক্রমে আকাশমাঠে খেলে উঠবে সপ্তচক্ষু রঙ। ডেকেপেতে ক্লান্ত মিলন শেষে আড়মোড়া ভেঙে দিগন্ত জুড়ে দাঁড়িয়ে উঠবে বেপরোয়া একটা হলুদ পুরুষব্যাঙ, যার নরোম উরুদ্বয়ের রপ্তানি পণ্য হবার দিনকাল আপাতত ফুরিয়ে এসেছে।

বৃষ্টিভেজা গদ্যকলাপ ২ : স্ফীতিহীন স্ফীতকার্য
বৃষ্টিভেজা গদ্যকলাপ ১ : এ হমিজ টু দ্য রেইন গডস


মন্তব্য

শাহীন হাসান এর ছবি

ভাল-লাগছে বৃষ্টি ...!

....................................
বোধহয় কারও জন্ম হয় না, জন্ম হয় মৃত্যুর !

....................................
বোধহয় কারও জন্ম হয় না, জন্ম হয় মৃত্যুর !

সৈয়দ আখতারুজ্জামান এর ছবি

অনেক কল্পচিত্র সমৃদ্ধ। প্রথমবারে তেমন কিছু বুঝতে পারি নাই। দ্বিতীয়বারে অনেকখানি পরিস্কার হয়েছে। অন্য রকম ভালো লাগছে এই সিরিজটা।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।