বৃষ্টিভেজা গদ্যকলাপ ৪ : ব্যাঙের বিয়ের দিন

মুজিব মেহদী এর ছবি
লিখেছেন মুজিব মেহদী (তারিখ: রবি, ০১/০৬/২০০৮ - ৮:৪০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আহা ব্যাঙ! ('হায় ব্যা' নয়!) বর্ষার সাথে তার সম্পর্কসূত্র আমি ভুলতে পারি না। ঢাকার ভূমিজলে কোনো ব্যাঙ নেই বলেই না আকাশে দেখি তার ছায়া! কী নিষ্ঠুর এই বেদনা! ভাবি কত বদলে গেছে আমার নাগরিক বর্ষা, ব্যাঙহীন। স্যুয়ারেজ উপচানো পচা ও দুর্গন্ধ জলের স্রোত টপকে ঘিনঘিনে পথঘাট পেরিয়ে তুমি যেদিকেই যাও বাল্য-কৈশোর-যৌবনের বর্ষা তুমি কোথাও পাবে না। ব্যাঙের বিয়ের কথা বাদই দাও, সোনাব্যাঙের পালটাপালটি কোরাসগীতি শুনতে শুনতে কাদাখেলের আনন্দ তুমি খুঁজবে কোথায়! কোথায় পাবে ব্যাঙের ছাতা! কোথায় তোমার আষাঢ়ে গল্পের পাত্র ও ক্ষণ! তবু রক্ষে যে সংসারসমরে লিপ্ত থেকেও কোনো এক চোরা ভ্যান্টিলেটর পথে সংসার থেকে ছুটি নিয়ে ক্রমবর্ষণ শব্দের মাঝে নিজের সাথেই নিজে আড্ডা জমিয়ে তোলার অবকাশ থেকে গেছে আজো। কিন্তু কতক্ষণ আর! নিজের মুখ, চোখ, অভিব্যক্তি, কণ্ঠস্বর সব খুব পরিচিত ও ক্লিশে বোধ হলে আশ্রয়ার্থে ঘুরে দাঁড়ানো লাগে অন্য কারো দিকে। ধরা যাক সামনে রবীন্দ্রনাথ, ধরা যাক বাতাস এসে খুলে দিয়ে গেছে তাঁর 'বর্ষার চিঠি'র পৃষ্ঠা। হায়, তাঁরও ঠিক অবিকল দশা দেখে ভিতরে কাত হয়ে পড়ে কান্নাকলসি! তাঁরও দেখি একই হাহাকার, ব্যাঙ হারাবার। কিন্তু আজকাল ব্যাঙ ডাকে না কেন ? আমি কলকাতার কথা বলছি। ছেলেবেলায় মেঘের ঘটা হলেই ব্যাঙের ডাক শুনতুম, কিন্তু আজকাল পাশ্চাত্য সভ্যতা এল, সার্বভৌমিকতা এবং 'ঊনবিংশ শতাব্দী' এল, পোলিটিকল অ্যাজিটেশন, খোলা ভাঁটি এবং স্বায়ত্তশাসন এল, কিন্তু ব্যাঙ গেল কোথায় ? হায় হায়, কোথায় ব্যাস বশিষ্ঠ, কোথায় গৌতম শাক্যসিংহ, কোথায় ব্যাঙের ডাক! শেষে ভাবি, জগৎসংসারের ঐতিহ্যবাহী হাহাকারসংস্কৃতি বুঝি এতটাই চিরন্তন যে তার চর্চারিক্ত কোনো সভ্যতা নেই, অসভ্যতাও ; মানে বন্যতা ও বর্বরতা। এর বিস্তার যৌনাঙ্গ থেকে মস্তিষ্ক পর্যন্ত প্রসারিত এবং সেটা ক্রিয়মান আছে গন্ধম ফল সেবন থেকে টুইন টাওয়ার উড়িয়ে দেয়া অবধি।

বৃষ্টিভেজা গদ্যকলাপ ৩ : কদমতলার মৌতাত


মন্তব্য

অপূর্ব  সোহাগ এর ছবি

মুজিব ভাই বরাবরই আপিন আমার প্রিয় মানুষ প্রিয় কবি, তাই আজ নতুন করে কি আর বলবো! ভাল লেগেছে খুব, খুব না বলে বলতে পারি অপরূপ........

মুজিব মেহদী এর ছবি

আরে, অপূর্ব যে! খুশি হলাম আপনার সাড়া পেয়ে।
আপনিও কি সাত সমুদ্র তের নদীর ওপারে পাড়ি জমিয়েছেন নাকি বড়ো ভাইয়ের পদাঙ্ক অনুসরণ করে?

পড়াশোনায় ব্যস্ত নিশ্চয়ই!
................................................................
আমার সমস্ত কৃতকর্মের জন্য দায়ী আমি বটে
তবে সহযোগিতায় ছিল মেঘ : আলতাফ হোসেন

... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

কিন্তু আজকাল পাশ্চাত্য সভ্যতা এল, সার্বভৌমিকতা এবং 'ঊনবিংশ শতাব্দী' এল, পোলিটিকল অ্যাজিটেশন, খোলা ভাঁটি এবং স্বায়ত্তশাসন এল, কিন্তু ব্যাঙ গেল কোথায় ? হায় হায়, কোথায় ব্যাস বশিষ্ঠ, কোথায় গৌতম শাক্যসিংহ, কোথায় ব্যাঙের ডাক!

ভাবছি ওয়ান্ডারল্যান্ডঅলাদের বুদ্ধি দেব, তাদের ওখানে আজকের শিশুদের ছেলেবেলা বোঝাতে পয়সা দিয়ে ডাকঅলা ব্যাঙ দেখাবার ব্যবস্থা করতে!

মনে হয় তবু স্বপ্ন থেকে জেগে
মানুষের মুখচ্ছবি দেখি বাতি জ্বেলে

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

মুজিব মেহদী এর ছবি

ভালো প্রস্তাব। দিনে দিনে সেরকম হয়ত হবেও।
কিন্তু ওতে পরিষ্কার জামাকাপড় পরা ছেলেমেয়েদেরই কেবল ব্যবস্থা হবে। ময়লা-ছেঁড়া কাপড়পরাদের ব্যবস্থা ওতে হবার নয়।
হায় ব্যাঙ!
................................................................
আমার সমস্ত কৃতকর্মের জন্য দায়ী আমি বটে
তবে সহযোগিতায় ছিল মেঘ : আলতাফ হোসেন

... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী

অতিথি লেখক এর ছবি

গুরুর পায়ে হাজার প্রনাম। মাঝে মাঝে পদধুলি চাই আমার আমার আঙিনায়।
মানে আমার লেখায়। আপনার মন্তব্য গুরুবাক্যসম শিরধার্য্য।

কীর্তিনাশা

মুজিব মেহদী এর ছবি

কী সর্বনাশ! আপনার এই দুর্মতিটা হচ্ছে কেন? আমাকে ব্লগ ছাড়া করতে চান না তো আবার!

অবশ্যই যাব আপনার ব্লগে, তবে এখন থেকে পা দুটো অন্য কোথাও রেখে তবেই যাওয়ার চিন্তা করব। আর গুরুবাক্য না রচা গেলে চুপ থাকব। হেহেহে।
................................................................
আমার সমস্ত কৃতকর্মের জন্য দায়ী আমি বটে
তবে সহযোগিতায় ছিল মেঘ : আলতাফ হোসেন

... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী

তীরন্দাজ এর ছবি

সেই রাম নেই, সেই অযোধ্যাও নেই....
সেই ব্যঙও নেই.....

ইত্যবসরে পাল্টে গেছে সব!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

মুজিব মেহদী এর ছবি

হ্যাঁ তীরুদা। সবই পালটে গেছে ও যাচ্ছে। পালটে গেছি আমরাও। একবার বৃষ্টিতে ভিজতে চাইলে কত কী চিন্তা করে নেই এখন।
................................................................
আমার সমস্ত কৃতকর্মের জন্য দায়ী আমি বটে
তবে সহযোগিতায় ছিল মেঘ : আলতাফ হোসেন

... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী

আহমেদুর রশীদ এর ছবি

আমার বাচ্চাদের ব্যাঙের ডাক শুনিয়েছি মোবাইলের রিং টোন থেকে। কালে কালে আরো কত কি হারাবে।

---------------------------------------------------------
আমাকে ডাকে আকাশ, বোঝে মাটি হাওয়া জল
বোঝে না মানুষ আর বিনাশী মুদ্রার ছল

---------------------------------------------------------

ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে
________________________________________
http://ahmedurrashid.

মুজিব মেহদী এর ছবি

দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানো।
অনেক কিছুতেই আমরা এখন এই পন্থা অবলম্বন করি। না করে উপায় নেই বলে।
................................................................
আমার সমস্ত কৃতকর্মের জন্য দায়ী আমি বটে
তবে সহযোগিতায় ছিল মেঘ : আলতাফ হোসেন

... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

কোনো এক অদ্ভুত কারণে, এই ভিনদেশে, আমি নিত্য রাতে ঝিঁঝি পোকার ডাক, এবং বৃষ্টি হলে ব্যাঙের ঘ্যানর ঘ্যানর ডাক শুনতে পাই। চোখ টিপি

মুজিব মেহদী এর ছবি

আশ্চর্য!
আসলেই শুনেন নাকি শুনেন বলে মনে হয়, এই নিয়েই দেখি সংশয়ে পড়া গেল এবার!

................................................................
আমার সমস্ত কৃতকর্মের জন্য দায়ী আমি বটে
তবে সহযোগিতায় ছিল মেঘ : আলতাফ হোসেন

... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

আসলেই শুনি, মুজিব ভাই।
বাসার আশেপাশে গাছ-গাছালি ভর্তি। বৃষ্টি হলে কোত্থেকে ব্যাঙ ডাকে ভেবে পাই না।

মুজিব মেহদী এর ছবি

বাহ! শুনতেও ভালো লাগছে।
দূষিত-কৃত্রিম নগরীর ভিতরে আপনি বসবাসের জন্য বৃক্ষশোভামণ্ডিত এমন একটা স্বর্গ খুঁজে নিতে পেরেছেন জেনে সত্যি ঈর্ষান্বিত হচ্ছি।
................................................................
আমার সমস্ত কৃতকর্মের জন্য দায়ী আমি বটে
তবে সহযোগিতায় ছিল মেঘ : আলতাফ হোসেন

... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।