আমাদের স্বপ্ন তরী

থার্ড আই এর ছবি
লিখেছেন থার্ড আই (তারিখ: রবি, ১৫/০৬/২০০৮ - ৯:১০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সেই দূর্ভাগা দ্বীপরাজ যাতে যাওয়া হলোনা।
মৃত্যু ভয়ে ঠিক যতটা ভীতু হবার কথা ছিলো শাহ সাহেবের আম খাওয়ার দৃশ্য দেখে কেউ অনুমানই করতে পারবেনা এই মানুষটি এতক্ষণ লঞ্চ ডুবে যাবার ভয়ে ছটফট করছিলেন।
বরিশালগামী লঞ্চ সুনন্দরবনের ভিআইপি কেবিনে একজন কেবিন বয় আম কেটে কেটে বিশাল একটা বলে রাখছে, শাহ সাহেব মনের আনন্দে সেই আম খাচ্ছেন, ম্যানেজার হামিদুর রহমান সাহেব পাশে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বসের জন্য সুন্দর পাকা পাকা আম গুলো বেছে দিচ্ছেন।

রাতে শাহ সাহেব আর ভাত খাননি, জাহাজের খাবার পরিচ্ছন্ন না, হেলথ এন্ড সেফটি রুলস মেনটেইন করা হয়নি -এই অভিযোগে তিনি রাতের খাবার না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়েছেন। যদিও কেবিন বয় মুখ ফসকে বলে ফেলেছে, স্যার যে পরিমান আম খাইছে......
ম্যানেজার হামিদের ধমকের চোটে বেচারা কেবিন বয় পুরোবাক্যটা শেষ করতে পারেনি।

ডেলিগেটসরা শেষ পর্যন্ত লঞ্চে করে যেতে রাজী হয়েছেন এই আনন্দেই আমার টেনশন কিছুটা কমেছে। তবে বার বার প্রজেক্ট ম্যনেজার এনাম সাহেব কে তাগাদা দিচ্ছিলাম আমরা ঠিক সময় মতো বরিশাল পৌঁছাতে পারবো কিনা, ডেলিগেটসদের রিসিভ করার জন্য বরিশাল লঞ্চঘাটে যথা সময়ে মাইক্রোবাসগুলো রেডি থাকবে কিনা? সব কিছু আমাকে যখন নিশ্চিত করা হলো তখন খানিকটা স্বস্তি পেলাম ।

প্রথম দেখাতেই লোকটিকে আমার সন্দেহ হয়েছিলো। হোটেল রুমে সব ডেলিগেটসদের নিয়ে মিটিং চলছে, সমস্ত আইটিনারী যখন একেবারে চূড়ান্ত ঠিক সে সময় শাহ সাহেবের ম্যানেজার হামিদুর মুখ কালে করে বসে আছে, সবাই বসে আছে চেয়ারে কিংবা বিছানায় কিন্তু হামিদুর রহমান বসে আছে ফ্লোরে ! একেবার শাহ সাহেবের পায়ের খুব কাছা কাছি।
-স্যার স্টিমারে করে যাওয়া নিরাপদ হবেনা, পটুয়াখালী রুটের এই স্টিমার খুব বিপদজ্জনক, বরিশাল হয়েই কুয়াকাটা যেতে হবে।যে কোন সময় দূর্ঘটনা ঘটতে পারে , সবাই গেলে যাক আমি আপনারে এইভাবে যেতে দেবোনা.....
পটুয়াখালীগামী লঞ্চ বিকেল ছয়টায় সদরঘাট থেকে ছেড়ে যাবার কথা। হোটেল রুমে বসে হামিদুর রহমান যখন এই বয়ান করছিলেন তখন দুপুর দুইটা ! সিদ্ধান্ত হলো হামিদুর রহমান যদি সবার জন্য আজ রাতের টিকিট ব্যবস্থা করতে পারেন তাহলে আমরা পটুয়াখালি হয়ে কুয়াকাটা না গিয়ে রবিশাল হয়ে কুয়াকাটা যাবো। তবে যেকোন মূল্যেই আজ রাতেই কুয়াকাটার উদ্দেশ্য রওয়ানা দিতে হবে।
উপকূলের মানুষ আবারও নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখে
কুয়াকাটার কলাপাড়ায় সিডর দূর্গতদের সাহয্যের জন্য বিসিএর (বাংলাদেশ ক্যাটারার্স এসোসিয়েশন,ইউকে) প্রকল্পের কৃষি মৎস উপকরণের আনুষ্ঠানিক বিতরন কার্যক্রমের দুইদিনের আইটিনারী যদি যথা সময়ে সম্পন্ন করতে হয় তাহলে আমাদের ২ জুন সন্ধায় রওনা হওয়া ছাড়া কোন উপায় নেই। ৩ জুন বিকেল সাইট ভিজিট করার কথা,পরদিন ত্রান বিতরণী অনুষ্ঠান। সকল জেলে আর কৃষকরা অপেক্ষা করে থাকবে নৌকা আর মাছ ধরার জালের জন্য। বিসিএ তাদের নৌকা,মাছ ধরার জাল ,পাওয়ার ট্রিলার,সেচ পাম্প ও দুটি মেডিকেল সেন্টার দিয়ে সহায়তা করবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
হামিদুর রহমান তার নতুন দায়িত্ব নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো, আর কোন দিকে তার দেখবার সময় হচ্ছেনা। বরিশাল গামী সবচেয়ে বড় লঞ্চের ১১ টা ভিআইপি টিকিট জোগার করাই তার একমাত্র কাজ হয়ে গেলো।

বিকাল চারটা । ঢাকায় তখন মুশলধারে বৃষ্টি। "তানভীর ভাই লঞ্চে যাওয়া যাবেনা, ওয়েদার খারাপ, তাছাড়া সবাই ভয় পাচ্ছে , বরিশালের টিকিট পাওয়া যাচ্ছেনা, হামিদ সাহেব যদিও এখনও চেষ্টা করছেন, আমরা সকালে মাইক্রোবাসে করে কুয়াকাটা যাবার সিদ্ধন্ত নিয়েছি। আপনি জলদি আসেন !"
এমন টেলিফোন পেয়ে আমি বনানী থেকে ট্রাফিকজ্যাম ঠেলে অনেকটা উড়ে এসে কাকরাইল স্কাউট ভবনে হাজির হলাম।
ভবনটির চতুর্থতলায় শাহ সাহেবের ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী। তিনি প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়াম্যান। বিসিএর ডোনেশন ফান্ডে যদিও ওনি কোন অর্থ জমা দেননি, তবুও প্রকল্পটির ত্রান সামগ্রী বিতরণ কাজে তিনি অংশ নিতে চান বলে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন, তাই বিসিএ কর্মতারা আর তাকে হতাশ করেননি। ম্যনেজার হামিদুর রহমানের দায়িত্ব হলো ২৪ ঘন্টা তার বস শাহ সাহেবকে দেখভাল করা। সে তার দায়িত্ব যথাযথভাবেই পালন করছে। প্রকল্প শুরুর ঠিক আগের দিনে এই দুই জন বাড়তি লোকের জন্য আমাকে সমস্ত ট্যুর প্লান নতুন করে সাজাতে হচ্ছে।

অফিস কক্ষে সবাই চুপ করে বসে আছে, কেউ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যেতে রাজিনা। তার উপর আমাদের ট্রেজারার লঞ্চে হাই কমোড আছে কিনা সে বিষয়টি নিয়ে বার বার তাগাদা দিচ্ছেন। সব কিছু মিলিয়েই সিদ্ধান্ত,বাই রোডেই যাওয়া হবে। ডেলিগেটসরা এর আগে কেউই লঞ্চ যার্নি করেনি। তবে ২৫/৩০ বছর ধরে ইংল্যান্ডে থাকলেও বাংলাদেশের লঞ্চ ডুবির খবর খবর নিয়ে তারা বেশ সর্তক। সাহায্য করতে গিয়ে নিজের জীবন বিপন্ন করতে রাজী নন। শেষ চেষ্টা করতে বললাম আমরা বরং সদরঘাটে যাই , লঞ্চগুলো দেখে যদি আমাদের মনে হয় আনকমর্ফোর্টেবল তাহলে নিশ্চই বাই রোডে যাবো। এক্ষেত্রে আমাদের সাধারণ সম্পাদক আজাদ ভাই আমার অসহায়ত্ব দেথে আমার পক্ষ নিয়ে বললেন, দেখুন আমরা যাচ্ছি দূর্গতদের সাহায্য করতে, তাই সাময়িক কষ্ট মেনে নিয়েই আমাদের এই মহান দায়িত্বে অগ্রসর হতে হবে।

কিছুক্ষন পর হামিদুর রহমান দাঁত কেলিয়ে রুমে ঢুকলেন,"
স্যার টিকেট ম্যানেজ হয়েছে।"
রাত ভর হামিদুর রহমান নতুন প্রকল্প নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, কুয়াকাটায় তার বস যে হোটেলটিতে থাকবেন সেটি পাঁচ তারকা মানের কিনা সেটি নিশ্চিত করাই তার অন্যতম দায়িত্ব হয়ে দাঁড়িয়েছে।

যথা সময়ে লঞ্চ বরিশাল থামলো ভোর বেলা বরিশালে যথা রীতি মাইক্রোবাস হাজির , সকালবেলা নাস্তা খেয়ে, কুয়াকাটার উদ্দেশে যাত্রা। হঠাৎ বলা নাই কওয়া নাই একটা বিশাল তোড়ণের সামনে আমাদের মাইক্রোবাস থেমে গেলো। তোরণে লিখা 'প্রগ্রেসিভ ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান শাহ সাহেবের আগমন শুভেচ্ছা স্বাগতম' । প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শাহ সাহেবকে অতিমাত্রায় তৈল দিতে গিয়ে তার বসকে চেয়ারম্যান লিখে হামিদ সাহেব যে একটা মস্তভুল করেছেন সেটা তিনি হয়তো খেয়াল করেনি।

ট্যুরের অপর সদস্য একই প্রতিষ্ঠানের বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান মালিক সাহেব বিষয়টি খুবভাল করেই খেয়াল করেছেন, তবুও প্রজেক্টের সফলতার স্বার্থে বিষয়টি নিয়ে তিনি উচ্চ বাচ্য করেনি। একটা মানবিক দায়িত্ব পালন করতে এসে এভাবে অঘোষিত পথ সংম্বর্ধণার বিষয়টি আমাদের সময় কেড়ে নিলো। তার উপর পাঁচ পাঁচ টা ফেরী পার হয়ে কুয়াকাটা পৌঁছাতে সময় লাগলো সাড়ে ছয় ঘন্টা। মূল আইটিনারী থেকে আমরা পিছিয়ে পড়লাম তিন ঘন্টা।

কলাপাড়ায় যে গ্রামে ক্ষতিগ্রস্থদের সাহায্য করা হবে সেই গ্রামটা পরিদর্শনে যাবার কথা সেদিনই। তাই হোটেল রুমে খানিকটা ফ্রেশ হয়ে ডেলিগেটসদের সিডর ক্ষতিগ্রস্থ গ্রাম পরিদর্শনে যাবার জন্য প্রস্তুত হতে বলা হলো।

হামিদুর রহমানকে আর তার বসের সঙ্গে থাকতে দেয়া হচ্ছেনা। কুয়াকাটা ইন্টারন্যাশনাল হোটেলে শাহ সাহেবের স্থান হলেও তার ম্যনেজারকে অন্য হোটেলে পাঠিয়ে দেয়ার কারনেই হামিদুর রহমানের মুখ বিকাল থেকেই মলিন। ডেলিগেটসরা স্বস্তি ফিরে পেলেন, চাটুকার দূরে সরেছে। টিম লিডার আজাদ ভাই মুচকি হাসলেন।

রুনা খান মারের ফ্রেন্ডশিপ বোট সম্পর্কে আমি প্রথম জানতে পাই বিবিসির নদী পথে বাংলাদেশে' ভ্রমন করতে গিয়ে। বিস্তারিত পড়ার সুযোগ হয় বিপ্লব রহমানের অলৌকিক স্টিমার থেকে। তার পর যথন সিডর নিয়ে প্রকল্প পাশ হলো তখন সহ ব্লগার বিপ্লব ভাই আমাকে বলেন আমি যেন 'ফ্রেন্ডশিপের' সহায়তা নেই তাদের উপর বিশ্বাস করা যায়। সিডর নিয়ে এই প্রতিষ্ঠানটি অনেক ভালো কাজ করেছে। তার পর ই রুণা খান মারের সাথে আমার যোগাযোগ শুরু। তিনমাস প্রজেক্টটা নিয়ে কাজ করার পর সফলতার মুখ দেথতে পাই। আমাদের স্বপ্ন তরীএসে ভীড়ে কুয়াকাটায়।
দূর্গতদের মাঝে মডেল নৌকা তুলে দিচ্ছেন বিসিএ কর্মকর্তারা
এত কিছুর পর ও সিডর এলাকায় ক্ষতির পরিমান এতো বেশী যে আমাদের ৪৪ লাখ টাকার সামান্য সাহায্য হয়তো কিছুই না। তবুও কিছু পরিবার হয়তো নতুন করে বাঁচবার স্বপ্ন দেখবে...আবার হয়তো নৌকা ভাসাবে গভীর সমুদ্রে। এই মানুষগুলো স্বপ্ন দেখে ,স্বপ্ন বুনে স্বপ্ন ফেরী করে , প্রকৃতি কত নিষ্ঠুর ! তাদের এই ছোট ছোট স্বপ্নের সারথী ডুবিয়ে দেয় ! কিছু মানুষ আবার তাদেরই পাশে এসে নতুন করে স্বপ্ন গড়ে দেয়। হায় মানুষ বলেই এই সব কিছু সম্ভব । উপকূলের মানুষগুলো তবুও বেঁচে থাকে নতুন কোন যুদ্ধের অপেক্ষায়।

পটুয়াখালী হতে আমরা সদরঘাটের পথে ফিরছি, হঠাৎ হামিদুর রহমান হন্ত দন্ত হয়ে ছুটে আসলেন, তানভীর ভাই ,তানভীর ভাই....... সারেং কে থামান...( ইতি উতি করে তার বসের রুমে ওঁকি দিয়ে দেখলেন তিনি ঘুমাচ্ছেন ) এই ভাবে প্রতিযোগিতা করলে লঞ্চ ডুবে যাবে, একটা ব্যবস্থা নেন। সারেংকে বলেন লঞ্চ থামাতে।

আমি দেখতে পেলাম দুটো লঞ্চ পাশা পাশি চলছে ডেকের দ্বিতীয় ও নীচ তলার মানুষ গুলো হৈ হৈ করে হাত তালি দিচ্ছে, কিছুটা সময় ওরা আনন্দ করছে বটে তবে লঞ্চ ডুবে যাবার মতো কোন ঘটনা ঘটেনি। শান্তভাবে হামিদুর রহমানকে বললাম , "হামিদ সাহেব,আমার কেবিন এক ঝুড়ি আম এখনও আছে, কেবিন বয়কে বললে আপনাকে আম কেটে দেবে। অনেক রাত হয়েছে, আম খেয়ে ঘুমাতে চলে যান। সকালে সদরঘাট আসলে আমি আপনাকে ডেকে দেবো।"

ভোর হয়েছে আমাদের লঞ্চ নারায়ানগঞ্জের কাছা কাছি চলে এসেছে, হামিদুর রহমান তখনও মনের সুখে লঞ্চের ডেকে বসে আম খাচ্ছেন।


মন্তব্য

বিপ্লব রহমান এর ছবি

দুর্গতদের জন্য আপনার মহতি উদ্যোগকে শ্রদ্ধা। লেখায় (বিপ্লব)


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

থার্ড আই এর ছবি

এই প্রকল্পের নেপথ্যে আপনার অবদানের জন্য অসীম কৃতজ্ঞতা।
----------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে

-------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে

মাহবুব লীলেন এর ছবি

আপনাদের পিকনিকটা ভালোই হয়েছে মনে হয়

থার্ড আই এর ছবি

জনহিতকর কাজকে পিকনিক বইল্যা তাচ্ছিল্য করলেন গুরু?
---------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে

-------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে

মাহবুব লীলেন এর ছবি

যেরকম খাওয়া দাওয়া
থাকা এবং সুযোগ সুবিধার বর্ণনা দিলেন
তাতে মনে হলো এটা বোধহয় পিকনিক জার্নি

আর দুর্গত মানুষকে নৌকা না দিয়ে নৌকার প্রতীক দেয়াটাকে আপনি কীভাবে দেখেন স্যার?

থার্ড আই এর ছবি

সব মানুষ এক রকম হয়না, অতি বিলাসী জীবনযাপন করতে করতে অনেক সময় মানুষের প্রতিকূল পরিস্থিতিতে খাপ খাইয়ে চলার সামর্থ নষ্ট হয়ে যায়। আমাদের ট্যুর মেম্বারদের কয়েকজনের এমনটা হয়েছিলো। তবুও তাদের উদ্দেশ্য মহ্ৎ ছিলো ,এটাই বা কম কি?

আর নৌকার প্রতীক বিতরণের কৌতূহলী প্রশ্নের উত্তরে বলবো,
আমরা যে সমস্ত উপকরণ বিতরণ করেছিলাম তার মধ্যে,

১৫ টি ইঞ্জিন নৌকা: ১৬ হাত দীর্ঘ
৩ টি অপটিক্যাল ফাইবার বোট : ১৮ হাত দীর্ঘ
(এসব নৌকা ২০ বছর কোন রক্ষণা বেক্ষনের প্রয়োজন হবেনা)
ইঞ্জিন নৌকায় ব্যবহারের জন্য ১৮ সেট সাগরে মাছ ধরার জাল
৩ টি পাউয়ার ট্রিলার
৩ টি সেচ পাম্প ও
২ টি মেডিক্যাল সেন্টার।

এই সুবিধাগুলো তিনটি গ্রামের ১৮০ টি পরিবার ভোগ করতে পারবে।

১৬ হাত ও ১৮ হাত দীর্ঘ নৌকা গুলো জেলেদের হাতে হস্তান্তর করতে গেলে নৌকাগুলোকে সাগরপার হতে তুলে এনে মঞ্চে রাখা লাগে, অথবা সাগর পারে গিয়ে বিতরণ করা লাগে। আবার সাগরপারে গিয়ে ত্রান বিতরণ অনুষ্ঠান করলে , পাওয়ারট্রিলার ও সেচ পাম্পগুলো সাগরপাড়ে নিয়ে যেতে হতো।তার জন্য এই মডেল নৌকা হস্তান্তর।

তাছাড়া যেহেতু আমরা মাত্র ৪ দিনের জন্য গিয়েছিলাম এই অল্প সময়ে সবগুলো নৌকা তৈরী করা সম্ভব হয়নি, প্রতিটি নৌকা তৈরীতে ৩-৪ সপ্তাহ সময় লাগে। সে জন্যই প্রকল্পটি তিনমাস মনিটরিংকরা হবে। এই সময়ের মধ্যে বাকী কাজ সম্পন্ন হবে। কিন্তু যে সকল ক্ষতিগ্রস্থ জেলেরা এই সাহায্য পাবে তাদের তালিকা করে একটি আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে বিতরণ করা হয়েছে ।

--------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে

-------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে

মাহবুব লীলেন এর ছবি

ইয়েস স্যার
এইবার মনে হচ্ছে এটা একটা ত্রাণ কার্যক্রম
কিন্তু স্যার আপনার পোস্টের ৯০%ই কিন্তু বিলাসী ভ্রমণ সংক্রান্ত
যা আপনার পুরো ভ্রমণটাকেই প্রশ্নবোধক করে তোলে
(আমি কি বেশি ভুল বললাম?)

থার্ড আই এর ছবি

মাহবুব লীলেন বলেছেন :

কিন্তু স্যার আপনার পোস্টের ৯০%ই কিন্তু বিলাসী ভ্রমণ সংক্রান্ত
যা আপনার পুরো ভ্রমণটাকেই প্রশ্নবোধক করে তোলে

আসলে লেখাটার থিমই ছিলো ভ্রমন সংক্রান্ত। তাই ভ্রমনটাকেই গুরুত্ব দিয়েছি। তবে কার্যক্রমটা ছিলো ত্রানের।রাশি রাশি তথ্য আর উপাত্ত দিয়ে গুরু গম্ভীর রিপোর্ট লিখে পাঠকের বিরক্তির কারন হতে চাই নি ।আপনার কৌতুহলের কারণেই মন্তব্যে ত্রাণ কার্যক্রমের খানিকটা ব্যখা দিলাম।

আর ভ্রমনটা বিলাসী হলেও এই বিলাসিতাকে কিন্তু লেখক হিসাবে আমি কোথাও প্রশ্রয় দেইনি, বরং চরিত্রগুলোকে প্রকারান্তরে পাঠকের কাছে উপস্থাপন করতে চেয়েছি।
-----------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে

-------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে

মুশফিকা মুমু এর ছবি

আপনি এত ভাল কাজ করছেন দেশের জন্য দেখে ভাল লাগল হাসি
আর ওই চেয়ারম্যানের বেপার.... কি আর করবেন এমনই হয়। মন খারাপ

সিডর দু্র্গতদের জন্য ফেব্রুয়ারীতে সিডনিতে একটা ডিনার এর আয়োজন করেছিল বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়া ডিসাসটার রিলিফ কমিটি, আমি তেমন কিছু না করলেও গেস্টদের রিসিভ করা, রিসেপশন এ টিকেটের টাকা নেয়া, অনুষ্ঠান শেষে ফুলের তোড়া দেয়া এসব টুকিটাকি কাজ করেছিলাম। টিকিট ছিল জনপ্রতি ১০০ ডলার (মিনিমাম) আর টাকা সংগ্রহ ছারাও ডিনারের উদ্দেশ্য ছিল দেশের অবস্থার কথা অন্য দেশিদের জানানো। ডিনার এ বেশ কিছু অস্ট্রেলিয়ান গন্যমান্যরা আসেন, বিশেষ করে স্যাডো ট্র্যাসারার। বেশ কয়েকজন বক্তৃতা দেয়ার পর যখন ট্র্যাসারার আসলেন বক্তৃতা দিতে, দেখি হন্তদন্ত করে কিছু লোকজন বড় বড় ক্যামেরা রেডি করছে, পরে জানতে পারি ওরা এসবিএস টিভি চ্যানেল (অস্ট্রেলিয়ান একটা টিভি চ্যানেল) থেকে এসেছে। এতখন যে ওরা ছিল তা টেরই পাইনি। যাইহোক আমরা বেশ অনেক টাকা রেইস করি, প্রায় ১৫ হাজার ডলার বা এর কিছু বেশিও হতে পারে। ট্র্যাসারার একাই দিয়েছিল ৩ হাজারের মত।

লেখার জন্য, কাজের জন্য ৫ তারা হাসি
---------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍

------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

থার্ড আই এর ছবি

দেশে গেলে অনেকে রসিকতা করে বলে," এতো দেশ প্রেম তোমার,দেশ ছেড়ে বাইরে থাকো ক্যান?"
উত্তর দেইনা,তবুও ভাবি দেশে থাকলে হয়তো সিডর দূর্গতদের জন্য এভাবে সাহয্য করতে পারতামনা।
আমার অবস্থান থেকে এরচেয়ে আব বেশী দেশপ্রেম দেখানোর সুযোগ কি আমার আছে ?
আপনাকে ধন্যবাদ।
---------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে

-------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনাদের সবাইকে টুপি খোলা অভিবাদন।

থার্ড আই এর ছবি

আপনার অভিবাদন আমাদের অনুপ্রেরণা।
---------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে

-------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে

কীর্তিনাশা এর ছবি

সিডর দূর্গতদের পুনর্বাসন কাজে অংশ নেবার সৌভাগ্য আমারো হয়েছিল। আমরা আমাদের প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে তিনটি উপকুলবর্তি গ্রামে ২৫০ কাঁচা ঘর করে দিয়েছিলাম। কাঁচা ঘর মানে বাঁশের বেড়া আর টিনের চাল। সে সময় একটানা পাঁচ দিন লঞ্চে কাটাতে হয়েছিল। ঘুরতে হয়েছিল বরগুনার আমতলি, তালতলি থেকে শুরু করে পটুয়াখালীর খেপুপাড়া পর্যন্ত বিস্তির্ন উপকুল।

লীলেন ভাই যে পিকনিকের কথা বললেন, অস্বীকার করবো না যে পিকনিকের একটা আবহ ছিল আমাদের সে ট্যুরে। তবে কাজও করেছি আমরা খুব যত্ন করে। বেশি লোক যাইনি খরচ বাঁচাবো বলে। আমরা অফিসিয়াল ছিলাম মাত্র চারজন আর ঘর তৈরীর মিস্ত্রি ছিল বিশ জন।

আমি কোনদিন ভুলতে পাড়বো না আমতলী থানার বালিতলা গ্রামের সেই বৃদ্ধার কথা সিডর যার সব কেড়ে নিয়েছে - তার উপার্জনক্ষম ছেলে, ছেলের বউ, নাতি-নাতনী। আমরা তার ঘর তৈরী করার পর তার সে কি কান্না। সে কান্নায় আমাদের সবার চোখ ভিজে উঠেছিল।

আমি জানি সিডরে লক্ষ মানুষ তাদের ঘর-বাড়ী হারিয়েছে। সে তুলনায় আমাদের এই ২৫০টা ঘর (তাও আবার কাঁচা) কিছুই না। তারপরও আমাদের সীমিত ক্ষমতার কথা বিচার করলে এটুকুই আমার কাছে অনেক কিছু।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

থার্ড আই এর ছবি

কীর্তি আপনার কীর্তির জন্যও স্যলুট। সবাই মিলে আমরা দূর্গতদের পাশে দাড়িয়েছি বলেই তো ওরা নতুন করে বাচাঁর স্বপ্ন দেখে। ২৫০ টা ঘর কমকি? আসলে উপকূলে ঘর তৈরী করাটা বেশ কঠিন। পটুয়াখালীর কলাপাড়া ও পশ্চিম কুয়াকাটায় আমি দেখেছি মানুষ পলিথিন দিয়ে কোন রকম একটা আবরণ দিয়ে রাত্রী যাপন করছে। কেউ সেখানে কাঁচা কিংবা পাকা বাড়ী তৈরী করে দেয়ার অনুমতি পাচ্ছেনা, কারণ জায়গা গুলো সব সরকারী খাস জমি্। স্থায়ী আবাস নির্মান করলে পরে সে জমি উদ্ধার অসম্ভব হবে সে ভয়ে সরকার বাড়ী নির্মানে নিরুসাহিত করছে বলে স্থানীয় জনসাধারণের অনেকেই অভিযোগ করেছে।
----------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে

-------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে

স্পর্শ এর ছবি

কুয়াকাটা গেছিলাম বেড়াতে। সেসময়ের স্মৃতি নিয়ে আমার একটা পোস্ট

আপনার পোস্টে যে জালে ছবিটা দিয়েছেন সেই জাল নিয়ে লেখা। আমার অভিজ্ঞতা ছিল অন্য রকম। লঞ্চে নিচতলায় চড়ে গেছিলাম। অনেক মানুষ খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে। মন খারাপ
....................................................................................
অতঃপর ফুটে যাবার ঠিক আগে হীরক খন্ডটা বুঝলো, সে আসলে ছিল একটা মামুলি বুদবুদ!


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

থার্ড আই এর ছবি

আপনার লেখাটা পর্লাম । শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।
---------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে

-------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে

আহমেদুর রশীদ এর ছবি

৪৪ লাখ টাকার ত্রান দিতে কত টাকা খরচ হলো?

---------------------------------------------------------
আমাকে ডাকে আকাশ, বোঝে মাটি হাওয়া জল
বোঝে না মানুষ আর বিনাশী মুদ্রার ছল

---------------------------------------------------------

ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে
________________________________________
http://ahmedurrashid.

থার্ড আই এর ছবি

খরচের টাকা পুরাটাই প্রত্যেকে তাদের ব্যক্তিগত পকেট থেকে যোগান দিয়েছেন।
-----------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে

-------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে

আহমেদুর রশীদ এর ছবি

অভিনন্দন

---------------------------------------------------------
আমাকে ডাকে আকাশ, বোঝে মাটি হাওয়া জল
বোঝে না মানুষ আর বিনাশী মুদ্রার ছল

---------------------------------------------------------

ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে
________________________________________
http://ahmedurrashid.

ধুসর গোধূলি এর ছবি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।