দেবতা পুরুষ :০১
ঠিক কি কারণে সুমন আমার উপর রেগে গেলো আমি বুঝে উঠার আগেই আমার গালে সজোরে আঘাত করতে থাকে সে। আমি চড়ের ধাক্কা সামলাতে না পেরে গাড়ীর সিটে লুটিয়ে পড়লাম। অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলাম সুমনের মুখের দিকে ! খানিক পরে চুল দিয়ে নিজের মুখটা ঢাকার চেষ্টা করলাম,যেন ড্রাইভারের চোখা চোখি না হয়। মিনিট কতক লোকটা আমার মুখে, মাথায় , পিঠে চড় খাপ্পর দিয়ে ড্রাইভারকে হুঙ্কার দিয়ে বাসায় দিকে যেতে নিদের্শ করে পাথরের মতো আমার পাশের সিটে বসে থাকলো। আমি মাথা নিচু করে হাটুতে আমার মুখ গুঁজে থাকলাম বাসায় পৌঁছানো পর্যন্ত।
ঘটনার পূর্ব সূত্র হলো। আমি আর সুমন দুজনেই খানা খাজানায় খাচ্ছিলাম। খাওয়া প্রায় শেষ সুমন গেলো বিল দিতে , এসময় আমি টেবিলে একা বসে ছিলাম। পাশের সিটে বসা বেশ কয়েকজন তরুন আমাকে লক্ষ্য করে কিছূ একটা বলেছে, আমি সেই বাক্যালাপ শূনতে পাইনি। পাশের সিটে বসা সেই ছেলেদের কথাগুলোই হয়তো রিয়েক্ট করেছে সুমনকে। কিন্তু এখানে আমার কি দোষ ছিলো বলেন ?
- আমি জানি আমার সৌন্দর্য আমার জন্য অভিশাপ ! কিন্তু কেউ যদি আমাকে সুন্দর বলে কমেন্ট করে কিংবা কোন কিছূর প্রশংসা করে, সুমন সেটা সহ্য করতে পারেনা ।
টেবিল থেকে তুলে নিয়ে সুমন আমাকে গাড়িতে নিয়ে ড্রাইভারের সামনে.....
-আপনি পরে জানতে চাইলেনা না এই ধরনেরর বণ্য পশুর মতো আচরণের কারণ কি?
- আপনি বলছেন বণ্য পশূ !! দেয়ালেরও কান আছে, ওর সমাজের পরিচয় জানলে আপনি অবাক হয়ে যাবেন। যেমনটা আমি অবাক হয়ে বিয়েই করে ফেলেছিলাম।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রোস্ট গ্রাজুয়েট করা, বাবার বিশাল ব্যাবসা, অসম্ভব ধনী পরিবারের সন্তান। আমি কেন, যে কেউ ই চোখ বন্ধ করে বিয়েতে রাজী হয়ে যাবে। কিন্ত, এই মানুষটিযে মনের দিক থেকে এতটা দরিদ্র সেটা বিয়ে না করলে কি বুঝতাম !!
-এখন কেমন আছেন ?
এইতো চলছে, আমার একমাত্র সাথী আমার কম্পিউটার। আর কিছুই করার সামর্থ আর নেই।
-সামর্থ নেই মানে বুঝলামনা। একটু খুলে বলবেন ?
না থাক, আরেক দিন বলবো।
-বলুন না প্লিজ।
আমার দুটো পা' অকেজো হয়ে গেছে। আমি হুইল চেয়ারে চলাফেরা করি।
-আমি দু:খিত ! দুটো পা' অকেজো হয়েছে মানে, কোন দূর্ঘটনা ?
-দূর্ঘটনা না বলে ঘটনা বলতে পারেন। আমার সারা জীবনটা যার কাছে সঁপে দিয়েছিলাম, তিনি আমাকে পুরস্কার দিয়েছেন।
নিজ হাতে ক্রিকেট ব্যাট দিয়ে আমার পা’ দুটো গুড়িয়ে দিয়েছেন । ডাক্তার বলেছে একটা পা কেটে ফেলতে হবে, অন্যটা ভালো হতেও পারে নাও হতে পারে।
.....প্লিজ আমাকে আজ আর কিছু জিজ্ঞেস করবেন না। আমার ভালো লাগছেনা।
মন্তব্য
বলার মত কোন ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। নিঃশব্দ বন্যতার নীরব আর্তনাদ।
আমিও যখন এই গল্প শুনছিলাম তখন আমারও এমন অনুভূতি হয়েছিলো।
---------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে
-------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে
ভুল কারনে বিবাহ করিলে (অথবা করাইলে.... প্রধানত পারিবারিক চাপেই এমন বিবাহ হইয়া থাকে) সঠিক জামাই পাইবার সম্ভাবনা কি বড়ই ক্ষীণ নয় ? হায়রে নারী.... ডিগ্রি আর বাপের টাকারে যদি দেবতা বানাও ... মাশুল তো দিবাই।
I think , therefore i am - Descartes
__________________________
ঈশ্বর সরে দাঁড়াও।
উপাসনার অতিক্রান্ত লগ্নে
তোমার লাল স্বর্গের মেঘেরা
আজ শুকনো নীল...
সবার ক্ষেত্র আপনার এই যুক্তিটা কার্যকর নাও হতে পারে। পারিবারিক বিয়ের ক্ষেত্রে অনেক সময় মেয়েরা বাবা মায়ের সম্মান ও তাদের ইচ্ছেকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকে। ক্ষেত্র বিশেষে তাদের কোন পছন্দ করার সুযোগ থাকেনা। তাইবলে মেয়েটাকে কেন এই ভুলের মাসুল দিতে হবে ??
---------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে
-------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে
লেখার উপরে মন্তব্য করেছি ভাই। জীবনের উপরে নয়। তবু বাঙালী নারীর মনে হয় বোঝার সময় হয়েছে যে বাবা মা কে সম্মান করা ভালো, তবে তার সাথে নিজের মতামতকে বিসর্জন করাকে গুলিয়ে ফেলা ঠিক কাম্য নয় আজ আর। বাবা মা তো আর সংসার করবেন না.. করবেন নারী। যাচাই করে দেখার প্রধান দায়িত্বও তার। ভুল সিদ্ধান্তের সমাধান আছে। মেরুদন্ড শক্ত করে নিজের পায়ে দাড়াতে হবে। প্রয়োজনে বিচ্ছেদ। ভুল মানুষের গলায় মালা দিলে তা শোধরাবে ভুল মানুষ এটা আশা করা বোধহয় বোকামি হবে। যতদিন এই দেবতারা এসব করে পার পেয়ে যাবে ততদিন তারা শোধরাবে কেন? কিন্তু বাঙালী নারীর বড় ভয় - বিচ্ছেদ হলে বাবা মা কি বলবেন বা সমাজ কি বলবে ...... এই ভয়েই চুপ চাপ সব সহ্য করেন... তাই তো অবস্হার পরিবর্তন নেই।
I think , therefore i am - Descartes
__________________________
ঈশ্বর সরে দাঁড়াও।
উপাসনার অতিক্রান্ত লগ্নে
তোমার লাল স্বর্গের মেঘেরা
আজ শুকনো নীল...
(দীর্ঘশ্বাস)
হুম।
---------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে
-------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে
....................................
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
যেহেতু এটা 'কল্প নয় সত্য', অতএব আমার কয়েকটা প্রশ্ন আছে। তবে তার আগে বলে নেই, আমি নিজে বাংলাদেশের একটা মধ্যবিত্ত পরিবারে বড় হওয়া, বাংলা মিডিয়াম স্কুল,কলেজ এবং ঢা বি তে পড়াশোনা করা - অর্থাৎ 'সমাজ' কি বস্তু আমার খুব ভালো ধারণা আছে।
তারপরও আমার কয়েকটা প্রশ্ন -
১। মেয়েটা কি কারণে ওই ছেলেটার সাথে থেকে গিয়েছিলো?!
২। মেয়েটা লেখাপড়া শিখেছিলো বলেই অনুমান করছি - তারপর?!
৩। ক্রিকেট ব্যাটের অতিনাটকীয়, প্রায় অবিশ্বাস্য ঘটনাটা ঘটার মত পরিস্থিতি পর্যন্ত গড়াবার আগে কারো পরিবার, আত্মীয়স্বজন কেউই কিছু করলো না?!
৪। যদি ধরেও নেই যে সামাজিক প্রতিপত্তি এবং অর্থের জোরে ছেলেটার কোন শাস্তি হবে না, এই ব্যাপারে আর কিছুই মেয়েটা করছে না?!
আমি একাধিক মেয়েকে চিনি যারা মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত - সবধরণের পরিবার থেকে এসেছে এবং স্বামী বা প্রেমিক কর্তৃক শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে।
কিন্তু কম্পিউটারকে একমাত্র সাথী করে একটা করুণাঘন জীবন কাটিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় নি।
আসলে আমার খুব কৌতূহল হয় জানতে, কোন মেয়ে লড়াই না করে হাল ছেড়ে দিলে - কেন সে এই বোকামি করছে, এখনও কিভাবে 'পরিবার' দেখে বিয়ে দেয়া হয়, এখনকার প্রজন্মেও কিভাবে এরেঞ্জ ম্যারেজ হয় (যদিও আমার বাবা মা এবং আরো অনেকেই সে ধরণের বিয়ের সার্থক দৃষ্টান্ত হিসেবে সামনে আছেন।), এইসব আর কি ...।
প্রথম প্রশ্নের উত্তর:
কাহিনীতে কোথাও কি প্রকাশ পেয়েছে মেয়েটা ছেলেটার সাথে থেকে গিয়েছিলো? তবে এই বিষটা আমি ইচ্ছে করেই অমিমাংশিত রেখেছি। হয়তো গল্পটিকে আর একটু বাড়ানোর ইচ্ছে আছে পরবর্তীতে।
দ্বিতীয় প্রশ্নের জবাব :
মেয়েটি পড়াশুনা করলেও আমাদের সমাজ ব্যবস্থার ছাঁচ টা এমন ভাবে তৈরী হয়ে আছে, বিয়ের পর একটা শিক্ষিত মেয়ে তার অধীকার আদায়ে শক্তিশালি ভুমিকা রেখেছে এমন দৃষ্টান্ত কম। হয়তো এই মেয়েটিও জ্বলে উঠতে পারেনি।
তৃতীয় প্রশ্নের জবাব:
আত্নীয় স্বজনই মেয়েটাকে আপাতত কম্পিউটার কিনে দিয়েছে। অবসরের সময় কাটানোর জন্য।
আবার ঘটনাটা এমনও হতে পারে সব কিছু হারানোর পর পরিবারের বোধের উদয় ঘটেছে।
আপনার এই কথার উত্তর আমার জানা নেই। একই সাথে আমারও একই প্রশ্ন এখনও কেন পরিবার দেখে বিয়ে দেয়া হয় ???
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ যৌক্তিক প্রশ্ন নিয়ে হাজির হবার জন্য।
---------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে
-------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে
গাড়িতে চড় খাওয়ার পর তো মেয়েটার পা ভেঙ্গে দেয়ার ঘটনাটা ঘটে? আমার প্রশ্ন সেটাই ছিলো - ওইরকম অপমানজনক ব্যবহারের পর, এবং অনুমান করি সেটাই প্রথম বা শেষ ছিলো না, মেয়েটা থেকে গিয়েছিলো কেন?
হুম !!!
কী ব্লগার? ডরাইলা?
নতুন মন্তব্য করুন