এই মনোরম মনোটোনাস শহরে অনেকদিন পর আজ সুন্দর বৃষ্টি হলো। রাত এগারোটা পার হয় হয়, এখনো রাস্তার রিকশা চলছে ছল ছল করে যেনো গোটিয়ার বিলে কেউ নৌকা বাইছে, ‘তাড়াতাড়ি করো বাহে, ঢাকার গাড়ি বুঝি ছাড়ি যায়।’ আমার জানালায় রোদন-রূপসী বৃষ্টির মাতাল মিউজিক, পাতাবাহারের ভিজে গন্ধভরা সারি, বিষাদবর্ণ দেওয়াল; অনেকদিন পর আমার ভারি ভালো লাগছে। ছমছম করা এই রাত্রি, আমারি জন্যে তৈরি এরকম লোনলী-লগ্ন আমি কতোদিন পাইনি, কতোকাল, কোনোদিন নয়।
গল্পের প্রথম বাক্যে ‘মনোরম’ শব্দটির ঠিক পরে ‘মনোটোনাস’ লিখতে প্রচুর সাহস লাগে। ‘রোদন-রূপসী বৃষ্টির মাতাল মিউজিক’, ‘লোনলী-লগ্ন’ – এই শব্দ ও শব্দবন্ধগুলিও লক্ষ্য করার মতো। আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের মতো কেউ একজন তা পারেন। সর্বসাকুল্যে ৫টি গল্পগ্রন্থে (‘অন্য ঘরে অন্য স্বর’, ‘খোঁয়ারি’, ‘দুধভাতে উৎপাত’, ‘দোজখের ওম’ ও ‘জাল স্বপ্ন, স্বপ্নের জাল’) সংকলিত ২৮টি গল্প, ২টি উপন্যাস (‘চিলেকোঠার সেপাই’ ও ‘খোয়াবনামা’) ও একটি প্রবন্ধ সংকলনগ্রন্থ (‘সংস্কৃতির ভাঙা সেতু’) নিয়ে যিনি সাম্প্রতিক বাংলা সাহিত্যের প্রধানতম গদ্যলেখকদের একজন হিসেবে স্বীকৃত ও অমরত্বের দাবিদার হবেন।
************************************************
একটু আগে কনফুসিয়াসের ব্লগ লাট্টু ২ পড়ছিলাম। আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের মৃত্যুবার্ষিকীর উল্লেখ দেখে নিজের ওপর রাগ হলো, কী করে ভুলে গেলাম? মাত্র ১০ বছরে!
************************************************
১৯৭৬-এর মে মাসে প্রকাশিত হলো আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘অন্য ঘরে অন্য স্বর’। যথার্থ নামকরণ, এই স্বর বাংলা সাহিত্যে এর আগে শোনা যায়নি। আগুন একেকটা গল্প। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া এই মুগ্ধ পাঠক তখন সেই বই বালিশের তলায় রেখে ঘুমায়, এমন অবস্থা। তখনো লেখককে চাক্ষুষ দেখিনি। এই বইয়ের প্রচ্ছদ করেছিলেন কাজী হাসান হাবিব, তাঁকেও তখন শুধু নামে চিনি, পরবর্তীকালে যিনি আমার খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু হয়ে উঠবেন। হাবিবকে নিয়ে একটি পোস্ট ক’দিন আগে সচলে দিয়েছিলাম – হাবিব, বন্ধু আমার ।
আজ দু’জনের কেউ আর পৃথিবীতে নেই। নয় বছরের ব্যবধানে দু’জনেই গেছেন ক্যানসারে – আগে হাবিব, পরে ইলিয়াস। ৯৬ সালের জানুয়ারিতে আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের পায়ে ক্যানসার ধরা পড়ে, দু’মাস পরে ডান পা সম্পূর্ণ কেটে বাদ দেওয়া হয়। মৃত্যু হলো ৯৭-এর ৪ জানুয়ারি।
************************************************
লেখকের সঙ্গে চাক্ষুষ পরিচয় তাঁর হাটখোলার বাসায় ৭৮-এর এক দুপুরে। উপলক্ষ মনে নেই, সুকান্ত চট্টোপাধ্যায় ও সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে গিয়েছিলাম। ঘনিষ্ঠতা তেমন কিছু হয়নি, হওয়ার কথাও নয়। তবে দুটি স্মরণীয় বিকেল তাঁর সঙ্গে কেটেছিলো বগুড়া শহরে তাঁর পৈত্রিক বাড়িতে। বগুড়া আমারও শহর, গ্রীষ্মের ছুটিতে গেছি। ইলিয়াস ভাইও এসেছেন। পরপর দুই বিকেলে তাঁদের বাড়ির পুবদিকে গাছপালায় ঘেরা খোলা বারান্দায় বসে আড্ডা হয়েছিলো। তাঁর ছোটো ভাই খালিকুজ্জামান ইলিয়াসও অল্পক্ষণ বসে কোথাও বেরিয়ে গেলেন। আমরা দু’জনে সন্ধ্যা পর্যন্ত অনন্ত বকবক চালিয়ে যাই।
ইলিয়াস ভাইদের জলেশ্বরীতলার বাড়িটির অবস্থান কিছু বিচিত্র। পুবমুখো একতলা বাড়ি বাইরে এলে প্রথম চোখ ধাক্কা খাবে রাস্তার উল্টোদিকে জেলখানার বিশাল উঁচু দেওয়ালে। তার পাশে জেলর সাহেবের বাসস্থান। তার দক্ষিণ-পূর্ব কোণে অফিসার্স ক্লাব, টেনিস কোর্ট, পাশে জেলা প্রশাসকের বাংলো। এগুলির পুব সীমানা ঘেঁষে করতোয়া নদী, ইলিয়াস ভাইদের বাড়ির দরজা থেকে তার দূরত্ব পাঁচশো গজের বেশি হবে না।
সেই দুই বিকেলের আলাপের দুটি বিষয় মনে আছে। ইলিয়াস ভাই জিজ্ঞেস করলেন, জেমস জয়েসের ‘ইউলিসিস’ পড়েছি কি না। বললাম, পড়তে শুরু করেছিলাম, কিছুদূর গিয়ে দম ফুরিয়ে গেছে। তিনি ‘ইউলিসিস’ পাঠের সহজ রাস্তা বাতলে দিয়ে বললেন, ওই বইয়ে কিছু রগরগে অংশ আছে, খুঁজে খুঁজে ওগুলি আগে পড়ে ফেলো। তারপর গোড়া থেকে শুরু করতে পারো!
আরেকটি প্রসঙ্গ এলো গল্প-উপন্যাসে সংলাপে আঞ্চলিক ভাষা ব্যবহারের অসুবিধা বিষয়ে। বগুড়া অঞ্চলের ভাষা কিছু দুরূহ ও তার একটি নিজস্ব টান আছে যা লেখায় আনা কঠিন বলে আমি মত দিই। মন্তব্য করি, বগুড়ার ভাষায় সংলাপ লিখলে সঙ্গে স্বরলিপি করে দিতে হবে।
সেদিন ইলিয়াস ভাই মুচকি হেসেছিলেন। আমার ধারণা ও মন্তব্য যে কতোটা অর্বাচীন ছিলো তার প্রমাণ পাওয়া গেলো তাঁর ‘খোয়াবনামা’ উপন্যাসে। তিনি অবলীলায় কী চমৎকারভাবে বগুড়ার পূর্বাঞ্চলের ভাষা সেখানে তুলে আনলেন। কোনো স্বরলিপি দরকার হয়নি।
************************************************
তাঁর লেখায় যেমন তির্যক রসিকতা ও শ্লেষের সন্ধান পাওয়া যায়, ব্যক্তিগত আলাপচারিতায়ও তার নমুনা অনেক আছে।
কলকাতায় তাঁর একটি পা কেটে বাদ দেওয়ার পর সেখানকার বন্ধু-শুভার্থীদের বললেন, আপনাদের এখানে একটা পা রেখেই গেলাম।
আরেকবার বললেন, আমার নেই পা-টাতে চুলকানোর অনুভূতি হচ্ছে!
ষাটের একজন বিখ্যাত কবি-কাম-গদ্যকারের রচনা আমার পছন্দ নয়। একদিন এক আড্ডায় ইলিয়াস ভাইকে ওই লেখকের লেখা বিষয়ে মন্তব্য করতে বলি। ইলিয়াস ভাই বললেন, ও খুব ভালো লোক, খুব ভালো লোক!
************************************************
বাংলা সাহিত্য অল্পবিস্তর যা পড়া আছে, তাতে দেখেছি অনেক নমস্য লেখকও অনেক আজেবাজে লেখা লিখেছেন। মানিক-বিভূতি-ওয়ালীউল্লাহ-সমরেশ সবাই। অথচ আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের সম্পূর্ণ রচনাবলী পড়েও একটি অসার্থক রচনার সন্ধান পাইনি। এটি অবশ্য আমার একান্ত ব্যক্তিগত অভিমত। তুলনামূলক বিচারের প্রশ্ন নয়, শ্রেষ্ঠত্বের কথাও নয়। কিন্তু এই অসম্ভব কর্মটি তিনি কীভাবে সম্পন্ন করলেন? দুই উপন্যাস ‘চিলেকোঠার সেপাই’ ও ‘খোয়াবনামা’ দুটি সম্পূর্ণ আলাদা পৃথিবীর ছবি। গল্পগুলির মধ্যে ‘খোঁয়ারি’, ‘উৎসব’, ‘অসুখ-বিসুখ’, ‘তারাবিবির মরদ পোলা’, ‘দোজখের ওম’ – কোনটা ছেড়ে কোনটার কথা বলি?
এই জাতের লেখকরা খুব পাঠকপ্রিয় হন না। তারও একটি নমুনা দিই। লতায়-পাতায় এক দূর সম্পর্কের আত্মীয় কিছুদিন আগে আমার কাছ থেকে ‘গল্পের বই’ চেয়ে বসলেন। আমি বিপদগ্রস্ত, কারণ সবাইকে বই ধার দিতে আমার মন ওঠে না – বিশেষত যারা বইয়ের যত্ন করে না, আঙুলে থুথু লাগিয়ে পাতা ওল্টায় বা বইয়ের পাতা ভাঁজ করে কদ্দুর পড়া হলো তার চিহ্ন রাখে। আমার এই আত্মীয়টি সেই দলের একজন।
এড়ানোর জন্যে বলি, আমার কাছে যেসব বই আছে আপনার ভালো লাগবে না।
পাল্টা প্রশ্ন এলো, কার লেখা আপনার ভালো লাগে?
উত্তরে আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের নাম বলি ইচ্ছে করেই।
আত্মীয় বললেন, তাঁর লেখা চার-পাঁচটা উপন্যাস পড়েছি, আমারও ভালো লাগে।
হাসবো না কাঁদবো বুঝে উঠতে একটু সময় লাগে। তারপরেও না বলে পারলাম না, এই লেখক সারাজীবনে সাকুল্যে দুটি উপন্যাস লিখেছেন। আর যে লিখবেন সে সম্ভাবনাও নেই, কারণ তিনি মৃত।
মন্তব্য
জুবায়ের ভাই ,
খুবই ভাল লাগল । ব্যক্তিগত মত হিসেবে যা বলেছেন তা আপাত অতিসয় উক্তি মনে হলেও নির্মম সত্য । কমল কুমার এর মত (আমার ১২ জন পাঠক চাই ) তিনি গো ধরে ছিলেন কিনা জানি না তবে তথাকথিত জনপ্রিয় লেখক হবার খায়েশে বা নিছ্ক সাহিত্যিক শখে তিনি লিখেন নি বলে আমার মনে হয়।
জুবায়ের ভাই এর লেখায় যা আসেনি তা হল , সমাজ এর নানা ক্রান্তিকালে তার ভুমিকার কথা ।
ভাল থাকুন।
নুরুজ্জামান মানিক
অতি তাৎক্ষণিকভাবে লেখা এই রচনায় ইলিয়াস সম্পর্কে শুধু নিজের কিছু অনুভূতি ও সামান্য দুয়েকটি স্মৃতির কথাই লিখতে চেয়েছি। সমাজ ও রাষ্ট্রের ক্রান্তিকালে তাঁর ভূমিকা লেখা আমার কর্ম নয়, অতো ওজনদার লেখা আমাকে দিয়ে হওয়ার নয়।
-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!
চমৎকার লাগলো আখতারুজ্জামান সম্পর্কে লেখাটি। "মনোরম মনোটোনাস" এখন মাথার মধ্যে ঘুরতেই থাকবে। কি অসাধারণ শব্দ-দ্যোতনা!
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ
যাক, সংক্রমিত করা গেলো! মনোরম মনোটোনাস আমার মাথায় বাস করছে অনেককাল ধরে।
-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!
মন্তব্য নেই ।
সব কিছু ভুলে বসছি আজকাল , ইলিয়াস আর কী দোষ করলেন ।
সম্প্রতি "মন্তব্য নেই" বলে কেটে পড়ছেন। এখন কি আমি বলবো, আমার লেখা বোধহয় আপনার খুব পছন্দ নয়....
-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!
সকালে নেট খুলেই আপনার পোস্টের শিরোনাম দেখে চোখ আটকে গেলো। রচনাসমগ্রের প্রথম খন্ডের প্রথম পাতার প্রথম লাইন - প্রিয়-পরিচিত। বিলেতে যখন প্রথম আসি, তখন মাত্র একটা স্যুটকেস আনতে দিয়েছিল তাই অনেক বই ফেলে রেখে আসতে হয়েছিল এয়ারপোর্টে। কিন্তু দুটো বই ফেলতে পারিনি, জীবু'র কবিতাসমগ্র আর ইলিয়াসের রচনাসমগ্র ১। এই পরিপাটি দেশে এসে যখন ঢাকা শহরের নিরবচ্ছিন্ন কেওস-কে খুব বেশী মিস করতাম (আর দেশে ফোন করার ইচ্ছা না হতো), তখন মাঝে মধ্যে ইলিয়াস পড়ে নিতাম কয়েক পৃষ্ঠা।
ইলিয়াসের ছেলে পার্থ আমাদের সমসাময়িক ছিল, একই ইয়ারের। ঢাবিতে যখন ভর্তি হই, ওর অনেক বন্ধুবান্ধব আমার ক্লাসমেট ছিল, সেই সুবাদে পার্থর সাথে কয়েকবার দেখা হয়েছিল। ওর বাপের নাম জানতাম, তবে তখনও পড়া হয়নি।
আগের এক পোস্টে ড্যালাসে আমার অতি ঘনিষ্ঠ বন্ধু আরিফের নাম উল্লেখ করেছি। একদিন টিকাটুলীতে আরিফদের বিশাল বাড়িতে গেলাম, ১৯৯৪ বা ৯৫ সালের কথা। ওর বাবা বিশিষ্ট ডাক্তার ছিলেন। আরিফ ওদের বাড়ির পিছনে একটা একতালা বাড়ি দেখিয়ে বললো, ঐ বাড়িতে ইলিয়াস চাচা থাকেন, পার্থকে দেখেছো না, ওদের বাসা ঐটা। পরে ওর কথায় বুঝলাম, আরিফদেরই ভাড়াটিয়া ওনারা, সেই বাড়িতে ইলিয়াস সাহেব প্রায় দুই দশক ধরেই বোধ হয় আছেন। আরিফদের বাসায় অনেক অনেক বার গেছি সেই সময়ে, কত দিন দুপুর সন্ধ্যা পার করে দিতাম, চা খেয়ে, আড্ডা মেরে, গান শুনে। কিন্তু পিছনের বাড়িটিতে আর যাওয়া পড়েনি, ইলিয়াসের সাথেও আর দেখা হয়নি। পরে সম্ভবত আজিমপুরের দিকে কোথাও চলে যান তারা, সঠিক খেয়াল নেই আজ।
*
সত্তুর আর আশির দশকের উত্তাল সংস্কৃতির অনেক মহীরুহের সাথে আপনার ব্যক্তিগত পরিচয়ের কাহিনীগুলা পড়তে চমতকার লাগে। এসব স্মৃতিকথা নিয়ে একটা ই-বুক করা যায় না? পরের প্রজন্মের এসব মানুষের কথা, সেসব সময়ের কথা মনে রাখা দরকার।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
ধন্যবাদ আপনার অনুভূতিগুলির অংশীদার করার জন্যে।
ঠিক, হাটখোলা এলাকায় ইলিয়াস দীর্ঘদিন বসবাস করেছেন। আমি যে বাসায় গিয়েছিলাম তার মালিক ছিলেন আরেক লেখক শওকত আলী, কর্মসূত্রে জগন্নাথ কলেজে তাঁরা সহকর্মী ছিলেন তখন। ওপরতলায় শওকত আলী থাকতেন, নিচে ভাড়াটে আখতারুজ্জামান ইলিয়াস। পরে তিনি আজিমপুর এলাকায় সরকারি কোয়ার্টারে উঠে যান।
স্মৃতিকথা নিয়ে ই-বুক করার কথা বলেছেন। দেখা যাক। আগে তো লিখতে হবে!
-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!
উনাকে একবারই দেখেছি।
তখন ঢাকা কলেজে পড়ি। কত শুনেছি, তিনি ক্লাসে বাংলা পড়ান
অসাধারণ।
আমি তার কোনো ক্লাস পাইনি। তখন তার এক পা কেটে বাদ দিয়েছে ডাক্তারেরা।
চলে গেলে পর তার কফিন ঢাকা কলেজের প্রাঙ্গনে এসেছিলো সেদিন।
সেইদিনই তাকে দেখি,
একবারই।
----------------------------------------------
আমাকে নিঃশব্দে অনুসরণ করে একটা নদী-
সাথে নিয়ে একটা পাহাড় আর একটা নিঃসঙ্গ মেঘ।
একে দেখা হওয়া বলে? দীর্ঘশ্বাস! তবে এই মাপের একজন লেখকের কফিন দর্শনও সারাজীবনের সঞ্চয়ের অংশ হয়ে থেকে যায়।
-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!
কি করবো বলুন। দূর্ভাগ্য!
----------------------------------------------
আমাকে নিঃশব্দে অনুসরণ করে একটা নদী-
সাথে নিয়ে একটা পাহাড় আর একটা নিঃসঙ্গ মেঘ।
আখতারুজ্জামান ইলিয়াস প্রথম পড়তে গিয়ে আমারও এই মনোরম মনোটোনাস আর লোনলি-লগ্নে চোখ আটকেছিলো। মুগ্ধ হয়ে ভাবছিলাম কেমন করে এইরকম লেখা সম্ভব।
আমার একটা ক্ষীণ সন্দেহ, আখতারুজ্জামানের নাম আর দু'এক প্রজন্ম পরে বাংলাপিডিয়া বা উইকিপিডিয়ার বাইরে আর কেউ জানবে না, কারো মনে থাকবে না।
এই ব্যাপারটা কেমন করে যে আটকানো যায় তাই ভাবি।
-----------------------------------
যা দেখি তা-ই বলি...
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
আমি অতোটা আশংকা করি না। ইলিয়াস পঠিত হবেন আরো বহুকাল ধরে। হয়তো বিপুল পাঠক তাঁর কোনোকালে হবে না, তা বোধ করি তাঁর চাওয়াও ছিলো না, কিন্তু বাংলা সাহিত্যের পাঠক ইলিয়াসকে পাশ কাটিয়ে যেতে পারবে না বলে মনে করি।
-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!
মুহম্মদ জুবায়ের, ধন্যবাদ আপনার লেখাটির জন্যে। ঐ জেনারেশনের কীর্তিমানদের ব্যক্তিগত জীবন স্মৃতিচারন নিয়ে ইবুক আমিও সমর্থন করি।
সুবিনয়: পার্থ এখন কুটনীতিক, বর্তমানে জেনেভাতে দেবপ্রিয়'র চাপ সামলাচ্ছে।
পৃথিবী কথা বলছে আপনি কি শুনছেন?
পৃথিবী কথা বলছে আপনি কি শুনছেন?
সত্যি কথা বলতে কি, খুব বেশি কীর্তিমানের সংস্পর্শে আমার আসা হয়নি। তবু যা আছে, লিখে উঠতে পারলে মন্দ হবে না। ধন্যবাদ আপনার মন্তব্য ও আগ্রহের জন্যে।
-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!
এই রকম অ্যানেকডোট আরো লিখুন। এগুলো পড়তে অনেক সময় অনেক বেশি ভাল লাগে। লেখককে না চিনলে, তাঁর জীবনকে না জানলে তাঁর লেখাও একটা মাত্রার বেশি চেনা যায় না বলে আমার ধারনা। উদাহরণ, এত এত বই পড়ার পরও সত্যজিৎ মনে হয় "ঘরের মানুষ" হত না যদি না তাঁকে নিয়ে লেখা আরো অজস্র বই পড়তাম।
কথাটা বোধহয় আংশিক সত্য। এই নিয়ে বিতর্ক হতেও পারে।
কেউ পড়তে আগ্রহী হলে লেখার লোভ তো হয়ই! দেখা যাক।
-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!
একটা খুবই অদ্ভুতুরে ব্যাপার ঘটেছে। আজ বিকালেই এই লেখাতে আমি একটা মন্তব্য করেছিলাম ( বেশ বড় কলেবরেই )। রাতে এসে এই লেখা আবার খুলতেই দেখি, সেটা হাওয়া। আমি ঠিক বুঝতে পারছি না। কোন কারনে আমার মন্তব্যটি এখানে এসেঈ পৌছুয়নি নাকি মডারেশনে কাটা পড়ল।
কেউ কোন সমাধান দিতে পারলে খুশি হব !
------------------------------------------------------
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
যাঃ, মন্তব্যটা জানা হলো না! কষ্ট করে আরেকবার লিখবেন?
কাল এই পোস্ট দেওয়ার সময়ও আমার সমস্যা হয়েছিলো, বারবার লেখা নেই হয়ে যাচ্ছিলো। মন্তব্য উধাও হওয়াটাও কিছু বিচিত্র। মাহবুব মুর্শেদকে জানিয়েছি।
-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!
আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের সাথে সাথেই যেই নামটি আমার মাথায় আসে তা হচ্ছে ড.হুমায়ূন আজাদ।
ড. হুমায়ূন আজাদের লেখার সাথে আমার পরিচয় অল্প কিছুদিন আগেই, বড়জোর ৪-৫ বছর আগে ( স্বাভাবিক ব্যাপার, আমিই খুব সম্ভবত সর্বকনিষ্ঠ সচল ) । যাই হোক, ড. আজাদের লেখার তখন আমি এক ভয়াবহ একনিষ্ঠ পাঠক। উনি যাই বলেন, তাই আমার কাছে বেদবাক্য।উনার অবিশ্বাস, দর্শন সব কিছুতেই তখন আমি গভীরভাবে নিমগ্ন। এমনকি নিজের একটি স্বতন্ত্র দর্শন কিংবা ভাবনা থাকতে পারে, সে কথাও আমি ভুলতে বসেছি। সেই ড. আজাদের একটি লেখায় ( এই মূহুর্তে মনে আসছে না , সাক্ষাৎকারে খুব সম্ভবত ) উনি আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের একটু সমালোচনা করলেন। বিশেষত, তার উপন্যাসগুলোর গুনগত মান নিয়ে প্রশ্ন তুললেন ( হুবহু কথাটা আমার খেয়াল নেই। দুর্বল স্মরণশক্তির জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী ) ।
সেই প্রথম আমি কিছুটা ধাক্কা খেলাম। সেই প্রথম আমার 'আজাদীয় ডকট্রাইন' থেকে কিছুটা বিচ্যুতি। কারন ততোদিনে আমি চিলেকোঠার সেপাই পড়ে ফেলেছি। হয়ত ড.আজাদের কোন যুক্তিগত ভিত্তি ছিল, হয়ত উনার কথাই ঠিক। কিন্তু আমি ব্যক্তিগত ভাবে চিলেকোঠার সেপাই পড়ে ইলিয়াসের এমন ভক্ত হয়ে গিয়েছিলাম যে, আমি একদমই এক মত হতে পারিনি।
চিলেকোঠার সেপাই, এমন একটা উপন্যাস যা ৭১ কে টেনে নিয়ে আসে এই ২০০৮ এ। কখনোই মনে হয়নি, আমি সেই সময়ে উপস্থিত নেই। রক্তে সে কি বিপুল মাদকতা। মনে হত, আমিও মিছিলে যাই সেই হাড্ডি খিজিরের সাথে। এরকম উপন্যাস আমি আমার এই ক্ষুদ্র পাঠক জীবনে খুব বেশি পড়িনি। তাই ড.আজাদের কথা আমি একদমই মানতে পারিনি, সেই সাথে নিজের যে একটা মতামত আছে, সেটাও আমি অনেকদিন পর অনুভব করি।
সেই থেকে শুরু। খোয়াড়ি, অন্য ঘরে অন্য স্বর একটার পর একটা লেখা পড়েছি, আর মুগ্ধ হয়েছি।
উনি যে কেন আরো কিছু লেখলেন না, সেটা ভেবে আমার আফসোস লাগে !!
-------------------------------------------------------
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
আপনার মন্তব্য অনেকগুলো প্রশ্ন সামনে নিয়ে আসে। সেসব বিশদ আলোচনার বিষয়, পরে কখনো সময় ও সুযোগমতো আলোচনা করা যাবে। আপাতত দুয়েকটি বিষয় নিয়ে আমার প্রতিক্রিয়া জানাই।
হুমায়ূন আজাদকে চিন্তক, অসাধারণ গদ্যলেখক এবং অত্যন্ত সাহসী (বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে এই ধরনের সাহসকে বোকামিও বলা যায়) মানুষ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ মনে করি। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই তাঁর সাহিত্যবিচারের মানদণ্ড নিয়ে আমার বিস্তর সংশয় তৈরি হয়েছে। চমক-দেওয়া কথা বলার ঝোঁক ছিলো, তা তাঁর বিশ্বাস থেকে আসতো কিনা বলা মুশকিল। নিজেকে বিশ্বমানের লেখক মনে করার আজগুবি অহংকারও তাঁর ছিলো এবং তা করতে গিয়ে বাংলা ভাষার তাবৎ কবি-লেখককে তিনি তুচ্ছজ্ঞান করেছেন। সুতরাং ইলিয়াস বিষয়ে তাঁর মত ও মন্তব্যকে উপেক্ষা করলে কোনো ক্ষতি হয় বলে মনে করি না।
হুমায়ূন আজাদ সম্পর্কে একটি পোস্ট সচলে দিয়েছিলাম কয়েক মাস আগে, ইচ্ছে করলে পড়তে পারেন।
মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে আখতারুজ্জামান ইলিয়াস একটি উপন্যাসের পরিকল্পনা করেছিলেন। হলো না। আমার কাছে এটিই সবচেয়ে বড়ো অপ্রাপ্তি। তবু বলি, তাঁর কাছে যা পেলো বাংলা সাহিত্য, তা-ও কম নয়।
-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!
প্রথমবার চিলেকোঠার সেপাই পড়তে কষ্ট হয়েছিলো, তবে সেই হাড্ডি খিজির এমনই পেয়ে বসলো ছাড়া হলো না। ওয়ালীউল্লাহ্-র কোন লেখাগুলি আপনার ভালো লাগেনি (জাস্ট জানতে আগ্রহ হলো বলে) যদি জানাতেন!
রোদ্দুরেই শুধু জন্মাবে বিদ্রোহ, যুক্তিতে নির্মিত হবে সমকাল।
বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।
হাড্ডি খিজিরকে ভুলবে কে!
সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর উপন্যাস তিনটি নিয়ে কোনো কথা নেই, যদিও আমার ধারণা 'চাঁদের অমাবস্যা' কিছুটা overrated। তাঁর গল্পসমগ্র পড়তে গিয়ে দেখি অধিকাংশই খুবই সাধারণ মানের, এমনকি বাজে ধরনের লেখা। তবে কয়েকটি অসাধারণ গল্পের লেখক তিনি, যেখানে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহকে চেনা যাবে। আমার বিচারে 'নয়নচারা' তাঁর সর্বশেষ্ঠ গল্প।
ধন্যবাদ ঝরাপাতা।
-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!
আমি এম্নিতেই বই পড়ি না, আমার বিশেষত্ব চলচ্চিত্র, কিন্তু আপনি এই লেখা দিয়ে আমাকে চিলেকোঠার সেপাই পড়ার জন্য কনভিন্স করে ফেলেছেন। ধন্যবাদ অনবদ্য একটা লেখার জন্য।
আমি এম্নিতেই বই পড়ি না, আমার বিশেষত্ব চলচ্চিত্র, কিন্তু আপনি এই লেখা দিয়ে আমাকে চিলেকোঠার সেপাই পড়ার জন্য কনভিন্স করে ফেলেছেন। ধন্যবাদ অনবদ্য একটা লেখার জন্য।
নীল ভুত।
নতুন মন্তব্য করুন